বিষয়বস্তুতে চলুন

কালাগ্নিরুদ্র উপনিষদ্‌

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কালাগ্নিরুদ্র
কপালে ত্রিপুণ্ড্রক চিহ্নধারী এক শৈব সাধু
দেবনাগরীकालाग्निरुद्र
IASTKālāgni Rudrā
নামের অর্থহিন্দু দেবতা শিবের একটি ধ্বংসকারী রূপ। এটি ভৈরব রূপের সমতুল্য।
উপনিষদের
ধরন
শৈব
সম্পর্কিত বেদকৃষ্ণ যজুর্বেদ
অধ্যায়ের সংখ্যা

কালাগ্নিরুদ্র উপনিষদ্‌ (সংস্কৃত: कालाग्निरुद्र - उपनिषत्) হল সংস্কৃত ভাষায় রচিত ১০৮টি উপনিষদের অন্যতম। এটি শিবের উপাসক শৈব সম্প্রদায়ের উপনিষদ্‌ এবং কৃষ্ণ যজুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত।[] কালাগ্নিরুদ্র উপনিষদ্‌ ১৪টি শৈব উপনিষদের অন্যতম।[]

এই উপনিষদে ঋষি সনৎকুমারকে ত্রিপুণ্ড্র বিষয়ে শিবের ধ্বংসাত্মক রূপ কালাগ্নিরুদ্রের উপদেশ কথিত হয়েছে। ত্রিপুণ্ড্র হল পবিত্র ভস্ম দ্বারা কপালে অঙ্কিত তিনটি আনুভূমিক রেখাযুক্ত তিলক। শৈবরা এই তিলক ধারণ করেন। এখানে ত্রিপুণ্ড্রের মাহাত্ম্য বর্ণনা করে শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্দিষ্ট মন্ত্র পাঠ করে ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কীভাবে বিভূতি বা পবিত্র ভস্ম দ্বারা ত্রিপুণ্ড্র অঙ্কণ করতে হয়, তার পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে।

ক্লস ক্লোসটারমায়ার ভস্মজাবালা উপনিষদ্‌, রুদ্রাক্ষজাবালা উপনিষদ্‌, বৃহজ্জাবালা উপনিষদ্‌অক্ষমালিকা উপনিষদের সঙ্গে কালাগ্নিরুদ্র উপনিষদ্‌কে শৈব উপনিষদের তালিকাভুক্ত করেছেন। উক্ত সব কটি উপনিষদেই শৈব অনুষ্ঠানগুলির মাহাত্ম্য কীর্তিত হয়েছে।[]

বিষয়বস্তু

[সম্পাদনা]

প্রথাগত মঙ্গলাচরণের পর ঋষি সনৎকুমার কালাগ্নিরুদ্রকে ত্রিপুণ্ড্রধারণ-সংক্রান্ত বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করতে বলেন এবং জিজ্ঞাসা করেন ত্রিপুণ্ড্রের জাগতিক কারণে ব্যবহার, প্রস্তুতপ্রণালী, ত্রিপুণ্ড্রধারণের স্থান এবং তার মাহাত্ম্য কি।[]

কালাগ্নিরুদ্র সনৎকুমারকে বলেন ‘সদ্যোজাতম্‌...’ ইত্যাদি পঞ্চব্রহ্ম স্তোত্র (তৈত্তিরীয় আরণ্যক থেকে) পাঠ করে ভস্ম সংগ্রহ করতে হবে। তারপর ‘অগ্নিরিতি ভস্ম’ মন্ত্র (অথর্বশীর্ষ উপনিষদ্‌ থেকে) পাঠ করে তা উৎসর্গ করতে হবে। এই মন্ত্রে ভস্মকে পঞ্চভূতের সমতুল্য ঘোষণা করা হয়েছে। তারপর ভস্মকে ‘মনস্‌ তোকে...’ স্তোত্র (ঋগ্বেদ থেকে) পাঠ করে জলের সঙ্গে মেশাতে হবে। এরপর মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করে ভস্ম মাথায়, কপালে, বুকে ও বাহুতে তিনটি আনুভূমিক রেখায় ধারণ করতে হবে। ‘ত্র্যয়ায়ুষা’, ‘ত্র্যম্বক’ ও ‘ত্রিশক্তি’ স্তবগুলি পাঠ করতে হবে। মাথার ত্রিপুণ্ড্রক কপালে একটি ভ্রু থেকে আরেকটি ভ্রুর মধ্যে আঁকতে হবে। এটি শম্ভুর (শিব) ব্রত নামে পরিচিত এবং মোক্ষদাতা।[][]

তিনটি রেখা একাধিক তয়ীর প্রতীক: যজ্ঞাগ্নি, ওঙ্কারের অক্ষরসমূহ, গুণ, ভুবন, আত্মা, শক্তি, বেদ, সোমরস উৎপাদনের সময়, শিবের একটি রূপ। প্রথম রেখাটি ‘গার্হ্যপত্য’ বা গৃহস্থের যজ্ঞাগ্নি, ওঙ্কারের অ, রজোগুণ, পৃথিবী, বহিরাত্মা, ক্রিয়া, ঋগ্বেদ, সোম-উৎপাদক প্রভাত ও মহেশ্বরের প্রতীক। দ্বিতীয় রেখাটি ‘দক্ষিণাগ্নি’ বা চিতাগ্নি, ওঙ্কারের উ, সত্ত্বগুণ, আকাশ, অন্তরাত্মা, ইচ্ছাশক্তি, যজুর্বেদ, সোম-উৎপাদক দ্বিপ্রহর ও সদাশিবের প্রতীক। তৃতীয় রেখাটি ‘অভাবনীয়’ বা হোমাগ্নি, ওঙ্কারের ম, তমোগুণ, স্বর্গ, পরমাত্মা, জ্ঞান, সামবেদ, সোম-উৎপাদক সন্ধ্যা ও শিবের প্রতীক।[]

কালাগ্নিরুদ্র ত্রিপুণ্ড্রকের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যিনি চার চতুরাশ্রমে এই চিহ্ন ধারণ করবেন তিনি সকল পাপ থেকে মুক্ত হবেন, সকল দেবতা পূজার ফল ভোগ করবেন, সকল তীর্থস্থানের ফল ভোগ করবেন, অনন্তকাল শ্রীরুদ্রচমকম পাঠের ফল ভোগ করবেন এবং সকল দেবতার সমতুল্য হবেন। তিনি সুখী জীবনযাপনের পর মৃত্যুর পর শিবের সঙ্গে মিলিত হবেন এবং জন্মান্তর থেকে মুক্ত হবেন। শেষে বলা হয়েছে এই উপনিষদ্‌ পাঠের ফলও একই।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Farquhar, John Nicol (১৯২০), An outline of the religious literature of India, H. Milford, Oxford university press, পৃ. ৩৬৪, আইএসবিএন ৮১-২০৮-২০৮৬-X {{citation}}: আইএসবিএন / তারিখের অসামঞ্জস্যতা (সাহায্য)
  2. Tinoco, Carlos Alberto। Upanishads। IBRASA। পৃ. ৮৭। আইএসবিএন ৯৭৮-৮৫-৩৪৮-০০৪০-২
  3. Klaus K. Klostermaier (১১ ডিসেম্বর ১৯৮৪)। Mythologies and Philosophies of Salvation in the Theistic Traditions of India। Wilfrid Laurier Univ. Press। পৃ. ১৩৪, ৩৭১। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৮৯২০-১৫৮-৩
  4. 1 2 3 4 Paul Deussen (১ জানুয়ারি ১৯৯৭)। Sixty Upanishads of the Veda। Motilal Banarsidass Publ.। পৃ. ৭৮৯–৯০। আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-২০৮-১৪৬৭-৭
  5. Upaniṣads: Selections from 108 Upaniṣads। Motilal Banarsidass Publ.। ১৯৭৫। পৃ. ২২৬। আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-২০৮-১৬১১-৪

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]