বিষয়বস্তুতে চলুন

গাজী গোলাম মোস্তফা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গাজী গোলাম মোস্তফা
পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য
ব্যক্তিগত বিবরণ
মৃত্যু১৯ জানুয়ারি ১৯৮১(১৯৮১-০১-১৯)
রাজস্থান, ভারত
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

গাজী গোলাম মোস্তফা (মৃত্যু: ১৯ জানুয়ারি ১৯৮১) একজন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ [] এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য।

রাজনৈতিক জীবন

[সম্পাদনা]

মোস্তফা ঢাকা শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। [][] তিনি বার্ষিক অনুদানের মাধ্যমে জনকণ্ঠ পত্রিকাকে সমর্থন করেছিলেন। [] তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি রেডক্রস বাংলাদেশের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন। [][] তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সিটি ইউনিটের সভাপতি ছিলেন।[] তিনি রেডক্রিসেন্ট বাংলাদেশের দায়িত্বে ছিলেন

মেজর ডালিম সংক্রান্ত ঘটনা

[সম্পাদনা]

১৯৭৪ সালে মোস্তফা মেজর শরিফুল হক ডালিম ও তার স্ত্রীকে ঢাকা লেডিজ ক্লাব থেকে একটি তর্ক করার পরে অপহরণ করে। মেজর ডালিমের আত্মীয় তাহমিনার সাথে বিয়ে হচ্ছিল কর্ণেল রেজার। সেখানে এই ঘটনা ঘটে।

তর্কের বিষয়ে অন্তত ২টি সংস্করণ চালু আছে। একটিতে বলা হয় যে মোস্তফার ভাই ডালিমের স্ত্রী নিম্মির প্রতি অশালীন মন্তব্য করায় বচসার সূত্রপাত হয়। এতে মোস্তফার দুই ছেলেও জড়িয়ে পড়েন।[]

আরেক সংস্করণে বলা হয় এই বিয়েতে ডালিমের স্ত্রী নিম্মি'র ভাই বাপ্পী এসেছিলেন কানাডা থেকে অতিথি হিসেবে। বিয়ের অনুষ্ঠানটি হচ্ছিল লেডিজ ক্লাবে। গাজী গোলাম মোশ্তফার ছেলে বসেছিলেন বাপ্পীর ঠিক পেছনের সারিতে এবং তিনি বাপ্পীর চুল ধরে টান দেন। এতে বাপ্পী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে তার পেছনের সারি থেকে সরে যেতে বলেন। মোস্তফার দুই ছেলে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা আরও কয়েকজন সহ তখন মেজর ডালিম তার স্ত্রী নিম্মি, কর্ণেল রেজার মা এবং ডালিমের আরও ২জন বন্ধুকে উঠিয়ে একটি রেড ক্রিসেন্টের মাইক্রবাসে করে অপহরণ করেন। []

গাজী মোশ্তফা এবং তার ছেলেরা প্রথমে তাদেরকে রক্ষীবাহিনী সদর দফতরে নিয়ে যান। তবে পরে সবাইকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসায় নিয়ে যান।

তবে ইতোমধ্যে ডালিমকে অপহরণের খবরে বেঙ্গল ল্যান্সার্স মোস্তফার বাড়ীটি আক্রমণ করে এবং সবাইকে জিম্মি করে। সারা শহরে সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট বসানো হয় প্রতিটা গাড়ীতে ডালিমদেরকে খুঁজে উদ্ধারের জন্য। শেষ পর্যন্ত সেনাপ্রধানকে ডাকিয়ে, তার সামনে সেখানে শেখ মুজিবুর রহমান বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।[১০][১১]

তবে পরবর্তীতে এর বিচারে কিছু বেঙ্গল ল্যান্সার্স সেনা কর্মকর্তা সাময়িক বা সম্পূর্ণ চাকরি হারান। মেজর ডালিমের পরে পোস্টিং হয় ঢাকার বাইরে, যেটাকেও তিনি শাস্তি হিসেবে দেখেছিলেন।[১২] বেঙ্গল ল্যান্সারস এবং মেজর শরিফুল হক সহ জড়িত অফিসাররা অনেকেই পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন।[১৩][১৪]

শেষ জীবন ও মৃত্যু

[সম্পাদনা]

জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মোস্তফা কারাগারে বন্দী ছিলেন। [] সামরিক আইন আদালত তাকে দশ বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত করেছিল,[১৫] এবং ১৯৮০ সালের ২৮ শে মার্চ তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। [১৬]

গাজী গোলাম মোস্তফা ১৯শে জানুয়ারী ১৯৮১ সালে ভারতে সপরিবারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।[১৭]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. International, Amnesty। Amnesty International Report (ইংরেজি ভাষায়)। Amnesty International Publications। পৃ. ১৮৪। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬
  2. Kādira, Muhāmmada Nūrula। Independence of Bangladesh in 266 days: history and documentary evidence (ইংরেজি ভাষায়)। Mukto Publishers। পৃ. ২০৮। আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৩২০৮৫৮৩। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬
  3. 1 2 Asian Survey (ইংরেজি ভাষায়)। University of California Press। পৃ. ১৯৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬
  4. Ullāha, Māhaphuja। Press Under Mujib Regime (ইংরেজি ভাষায়)। Kakali Prokashani। পৃ. ৭৯। আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৪৩৭২৮৯৪। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬
  5. Asian Studies (ইংরেজি ভাষায়)। Center for Asian Studies, Department of Government and Politics, Jahangirnagar University। পৃ. ৪৯। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬
  6. Asian Recorder (ইংরেজি ভাষায়)। K. K. Thomas at Recorder Press। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬
  7. "জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন আমি একজন ভাষা সংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা"আজকের অগ্ৰবাণী। ৭ মে, ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে, ২০২১ {{সংবাদ উদ্ধৃতি}}: |সংগ্রহের-তারিখ= এবং |তারিখ= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. "Bangladesh a Legacy of Blood"Scribd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২০
  9. "Assassination of Sheikh Mujibur Rahman (1975) - Dalim incident proves a sore point for young army officers - History of Bangladesh"Londoni (ব্রিটিশ ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২০
  10. Foundation, Bhashani। Searching for Bhasani Citizen of the World: The Life and Times of (Earnest) Mozlum Leader Maulana Bhasani (ইংরেজি ভাষায়)। Xlibris Corporation। পৃ. ২৩৫। আইএসবিএন ৯৭৮১৪৫৩৫৭৩১৩৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬
  11. Riaz, Ali। Unfolding State: The Transformation of Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। de Sitter Publications। পৃ. ২৩৯। আইএসবিএন ৯৭৮১৮৯৭১৬০১০৭। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬
  12. Karsten, Peter (১৯৯৮)। Civil-military Relations (ইংরেজি ভাষায়)। New York: Taylor & Francis, Garland Pub। পৃ. ৩১৮। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮১৫৩-২৯৭৮-৭। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২০
  13. "Shahriar's confession"thedailystar.net। দ্য ডেইলি স্টার। ১৯ নভেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬
  14. "Farooq's confession"thedailystar.net। দ্য ডেইলি স্টার। ১৯ নভেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬
  15. News Review on South Asia and Indian Ocean (ইংরেজি ভাষায়)। Institute for Defence Studies & Analyses.। পৃ. ২৪০। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬
  16. The Amnesty International Report (ইংরেজি ভাষায়)। Amnesty International Publications। পৃ. ১৮৪। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬
  17. "Samad Azad pays tributes to Gazi Golam Mostafa"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ জানুয়ারি ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২০