পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
| পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য | |
|---|---|
পদ্মাসেতুর পাশে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য | |
| অবস্থান | ফরিদপুর জেলা, মুন্সিগঞ্জ জেলা, শরিয়তপুর জেলা, মাদারীপুর জেলা, বাংলাদেশ |
| নিকটবর্তী শহর | ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ |
| স্থানাঙ্ক | ২৩°২৬′৩৯″ উত্তর ৯০°১৫′৪০″ পূর্ব / ২৩.৪৪৪৩° উত্তর ৯০.২৬১০° পূর্ব |
| আয়তন | ১১,৭৭২.৬০৮ হেক্টর |
| স্থাপিত | ২৬ নভেম্বর ২০২০ |
| কর্তৃপক্ষ | বাংলাদেশ বন বিভাগ |
পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষিত এলাকা। এটি দেশটির দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের পদ্মা নদী ও এর আশপাশের বিস্তৃত জলাভূমি ও স্থলভূমি জুড়ে বিস্তৃত।[১] এই অভয়ারণ্য ফরিদপুর জেলা, মুন্সিগঞ্জ জেলা, শরীয়তপুর জেলা এবং মাদারীপুর জেলা—এই চার প্রশাসনিক জেলার অংশ নিয়ে গঠিত।[২][৩] ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে এবং একই দিনে সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়।[৪] এর মোট আয়তন ১১,৭৭২.৬০৮ হেক্টর (প্রায় ১১৭.৭২ বর্গকিলোমিটার), যার মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জলাভূমি এবং অবশিষ্ট অংশ স্থলভাগ।[৫][৬][৪]
অবস্থান ও ইতিহাস
[সম্পাদনা]অভয়ারণ্যটি পদ্মা নদীর তীরবর্তী বিস্তৃত জলাভূমি[৭] ও আশপাশের স্থলভাগজুড়ে গড়ে উঠেছে। এটি চারটি জেলা—ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর—জুড়ে বিস্তৃত। নিকটবর্তী শহরের মধ্যে মাদারীপুর ও শরীয়তপুর উল্লেখযোগ্য।[৫][৮][৯][১০]
২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর এটি সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় এবং গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। অভয়ারণ্যটির মোট আয়তন ১১৭.৭২ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জলাভূমি এবং অবশিষ্ট এক-চতুর্থাংশ স্থলভাগ। এটি দুইটি অঞ্চলে বিভক্ত কোর এলাকা ৮১.১৯ বর্গকিলোমিটার এবং বাফার এলাকা ৩৬.৩০ বর্গকিলোমিটার।[১১][১২][১৩][১৪]
পদ্মা সেতুর আশপাশের নদী ও তীরবর্তী এলাকা প্রাচীনকাল থেকেই জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এখানে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী যেমন শুশুক এবং নানা ধরনের দেশি ও পরিযায়ী পাখি বাস করে। অভয়ারণ্যের উদ্দেশ্য নদী-নির্ভর এই অনন্য প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল রক্ষা এবং স্থানীয় ও বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টা জোরদার করা। নদীর গতিপথ পরিবর্তন, বালু উত্তোলন, দূষণ ও মানবসৃষ্ট চাপে ওই প্রতিবেশ বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন।[১৫][১৬]
জীববৈচিত্র্য
[সম্পাদনা]পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল। অভয়ারণ্যে মোট ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১১২ প্রজাতির পাখি, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৬ প্রজাতির উভচর, ৮৯ প্রজাতির মাছ, ২০ প্রজাতির প্রজাপতি এবং ২৯ প্রজাতির শামুক ও ঝিনুকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়াও এখানে ৩১২ প্রজাতির উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম বিদ্যমান।[১৭][১৮]
এ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে শুশুক, শিয়াল, খাটাশ, উদবিড়াল, মেছোবাঘ, বনবিড়াল, বেজি, ভোঁদড় ও বাগডাশ। পাখির মধ্যে দেশি ও পরিযায়ী উভয় ধরনের নানা প্রজাতি এখানে পরিলক্ষিত হয়।[১৭][১৯]
| শ্রেণি | প্রজাতি |
|---|---|
| স্তন্যপায়ী প্রাণী | শুশুক, শিয়াল, খাটাশ, উদবিড়াল, মেছোবাঘ, বনবিড়াল, বেজি, ভোঁদড়, বাগডাশ |
| পাখি | দেশি ও পরিযায়ী নানা প্রজাতি[১৭] |
| সরীসৃপ | গুইসাপ, দাঁড়াশ, খয়ে গোখরা, মেটে সাপ, ঢোঁড়া সাপ, টিকটিকি, গিরগিটি, জলচর সাপ, কাছিম, কচ্ছপ |
| কাছিম ও কচ্ছপ | গাঙেয় কাছিম, সুন্দি কাছিম, কড়িকাইট্টা, হলুদ কচ্ছপ[১৭] |
অভয়ারণ্যটির এই সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য পদ্মা নদী ও তৎসংলগ্ন এলাকার পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সংরক্ষণ সমস্যা
[সম্পাদনা]যদিও অভয়ারণ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য, তবুও বালু উত্তোলন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, দূষণ ও মানবসৃষ্ট চাপ এই অঞ্চলের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।[১৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য"। bforest.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ "Atlas on Ganges River Dolphin and Irrawaddy Dolphin of Bangladesh" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। ইউএনডিপি বাংলাদেশ; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ "Padma bridge wildlife sanctuary: 2 years on, still confined to words"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ অক্টোবর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- 1 2 "গেজেট পিডিএফ: "পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য" ঘোষণা" (পিডিএফ)। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়। ২৩ ডিসেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- 1 2 রহমান, সাদিকুর (২৪ জুন ২০২২)। "A sanctuary emerges to protect wildlife around Padma Bridge"। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ আগস্ট ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ "নং ২২.০০.০০০০.০৬৭.৪৫.০০৫.২০.১৫২ — "পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য" ঘোষণা করা প্রসঙ্গে"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়। ২৩ ডিসেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ তপু, আহমেদ হুমায়ুন কবির (২৫ জানুয়ারি ২০২৩)। "শুষ্ক মৌসুমে বিবর্ণ 'প্রমত্তা পদ্মা'"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ "বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২"। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ। ১০ জুলাই ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ "বন্যপ্রাণী-অভয়ারণ্য: তালিকা"। বন অধিদপ্তর। ১৯ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ "Environmental Action Plan — Padma Multipurpose Bridge Project" (ইংরেজি ভাষায়)। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ আব্দুর রশীদ, ড. শেখ মোহাম্মদ (২৫ জুলাই ২০২২)। "পদ্মা সেতুতে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য কেন?"। বাংলাভিশন। ১২ আগস্ট ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০২৫।
- ↑ "Environmental Safeguards in the Construction of Padma Bridge" (পিডিএফ)। এমআইএসটি ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইজেএসটি) — পদ্মা সেতুর বিশেষ সংখ্যা (ইংরেজি ভাষায়)। ১০। নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ "Ecological impacts on the distribution of Ganges River dolphin (Platanista gangetica) in the lower Ganges, Bangladesh"। জার্নাল অফ ফিশারিজ (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ (২)। ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ "Current Status of Ganges River Dolphin (Platanista gangetica) in South Asia: A Review" (পিডিএফ)। এশিয়ান জার্নাল অব কনসার্ভেশন বায়োলজি (ইংরেজি ভাষায়)। খণ্ড ১২ নং ১। জুলাই ২০২৩। পৃ. ১–১২। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- 1 2 "পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গিলে খাচ্ছে বালু খেকোরা"। বিভিনিউজ২৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ Draft Environmental Impact Assessment: Bangladesh — Padma Multipurpose Bridge Project (Annexed EIA) (পিডিএফ) (প্রতিবেদন) (ইংরেজি ভাষায়)। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- 1 2 3 4 ড. বিভূতি, ভূষণ মিত্র (১ মে ২০২৫)। "পদ্মা নদীর জীববৈচিত্র্য কি হারিয়ে যাবে"। কালের কণ্ঠ। ১২ আগস্ট ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০২৫।
- ↑ "PADMA MULTIPURPOSE BRIDGE PROJECT: Environmental Assessment and Management (Consolidated)" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। বিশ্বব্যাংক। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ "Bangladesh Dolphin Action Plan 2020–2030" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫।