পাকিস্তান–বাংলাদেশ মিত্রসংঘ
পাকিস্তান মিত্রসংঘ پاکستان کنفیڈریشن | |
|---|---|
পৃথিবীর অর্থোগ্রাফিক প্রক্ষেপণে সবুজ রঙে প্রস্তাবিত মিত্রসংঘ | |
| বৃহত্তম নগরী | ঢাকা করাচী |
| রাষ্ট্রভাষা | বাংলা, উর্দু |
| ধরন | প্রস্তাবিত রাষ্ট্রপতিশাসিত সাংবিধানিক ইসলামি মিত্রসংঘ |
| উপরাষ্ট্র | |
| আইন-সভা | সিনেট, জাতীয় সংসদ |
| আয়তন | |
• | ১০,৩০,৩৭৩ কিমি২ (৩,৯৭,৮২৯ মা২) |
| মুদ্রা | বাংলাদেশী টাকা / পাকিস্তানি রুপি |
| সময় অঞ্চল | ইউটিসি+৫ / +৬ (করাচি সময় / ঢাকা সময়) |
| গাড়ী চালনার দিক | বাম |
বাংলাদেশ–পাকিস্তান মিত্রসংঘ তথা বাংলাদেশ–পাকিস্তান কনফেডারেশন হলো প্রাক্তন প্রশাসনিক ইউনিট পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাথে আরেক ইউনিট পশ্চিম পাকিস্তান বা ১৯৭১-পরবর্তী ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তানের একটি মিত্রসংঘ গঠনের প্রস্তাব।
এই ধারণার সূচনা হয় ১৯৫০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক ফেডারেশনের মহাসম্মেলনে, যেখানে এটি "পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র" নামে প্রস্তাবিত হয়। ১৯৬২ সালের পর রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান এ বিষয়ে রমিজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলোচনা করেন, আর ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান লাহোরে ছয় দফা প্রস্তাবে একটি মিত্রসংঘীয় কাঠামোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে আহসান ফর্মুলা এবং নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ একটি কনফেডারেশন প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে খন্দকার মোশতাক আহমেদ গোপনে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির বিনিময়ে এই প্রস্তাব দেন, যা আলোচনার জন্য পরবর্তী রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান গ্রহণ করেছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নতুন রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবুর রহমানকে মিত্রসংঘের প্রস্তাব দেন, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে খন্দকার মোশতাক আহমেদের রাষ্ট্রপতিত্বের অধীনে মিত্রসংঘ নিয়ে গুজব ছড়ায়, যার পর ভারত সতর্ক করে যে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ভঙ্গ করলে তারা সামরিক পদক্ষেপ নেবে। ১৯৭৬ সালে মুহাম্মদ গোলাম তাওয়াব এবং নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামী পূর্ব পাকিস্তানের সদস্যরা প্রকাশ্য সভার আয়োজন করেন, যা কিনা এই ধারণাকে সমর্থন করেছিল বলে অভিযোগ উঠে।
পটভূমি
[সম্পাদনা]১৯৫০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক ফেডারেশনের মহাসম্মেলনে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল যার প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র শুধু কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল।[১] পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী মুহাম্মদ মুনির রচিত ফ্রম জিন্নাহ টু জিয়া বই অনুযায়ী ১৯৬২ সালের পরে পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের কথিত ফরমায়েশ থেকে মুক্তি পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে মুনিরের মাধ্যমে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান দেশটিকে একটি মিত্রসংঘে রূপান্তর কিংবা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন বা এমনকি স্বাধীনতা দেওয়ার প্রস্তাব দিলে কৃষক প্রজা পার্টির সদস্য ও বিরোধীদলীয় নেতা রমিজউদ্দীন আহমদ তা প্রত্যাখ্যান করেন।[২] ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান ফেডারেশনের জন্য পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান লাহোরে ছয় দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, যদিও সেটি আদতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে মিত্রসংঘ গঠনের প্রস্তাব ছিল।[১] ১৯৭১ সালের প্রথমদিকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে প্রস্তুতকৃত আহসান ফর্মুলা একটি মিত্রসংঘ গঠনের প্রস্তাব দেয় যেখানে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলি ভুট্টোকে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানকে সেই প্রস্তাবিত মিত্রসংঘের রাষ্ট্রপতি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।[৩] ৬ জুলাই ২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উন্মুক্ত করা গোপন নথিপত্র অনুযায়ী একই বছরে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার বদলে মিত্রসংঘের আশা করেছিলেন।[৪]
১১ মার্চ ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে পাকিস্তানের মার্কিন দূতাবাস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে প্রেরিত টেলিগ্রামে ঢাকার তৎকালীন মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাডের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী তৎকালীন পরিস্থিতিতে আহসান ফর্মুলার আদলে একটি মিত্রসংঘ গঠন ভালো সমাধান হতে পারতো।[৫] ভারতীয় ঐতিহাসিক শ্রীনাথ রাঘবনের মতে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বাধীনতার দাবি প্রত্যক্ষভাবে না তুলে মিত্রসংঘের প্রস্তাব করেছিল যার উৎস পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগোষ্ঠীর মাঝে নায্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আকাঙ্খার মধ্যে নিহিত ছিল।[৬] ২৪ মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকায় পাকিস্তানের প্রস্তাবিত খসড়া শাসনতন্ত্রের অর্থনৈতিক বিভাগগুলো নিয়ে সকাল ও সন্ধ্যা দুই দফা ইয়াহিয়া খান ও তার উপদেষ্টামণ্ডলীর সাথে দলটি আলোচনা করেছিল। দলের প্রতিনিধিরা খসড়া শাসনতন্ত্রে সংঘরাষ্ট্রের বদলে একটি মিত্রসংঘের প্রস্তাব করে।[ক] কিন্তু তা দলটির গঠনতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় পাকিস্তান সরকার এর বিরোধিতা করে।[৭] অন্যদিকে জুলফিকার আলি ভুট্টো প্রস্তাবিত মিত্রসংঘ বাস্তবায়ন করার অর্থ প্রদেশগুলোকে প্রায় স্বাধীন করে দেওয়া আখ্যা দিয়ে প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন।[৮] হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্টের মতে তৎকালীন রাজনৈতিক সংকট সমাধানে পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রবর্তিত রাষ্ট্রে দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ভিত্তিতে সৃষ্ট কোয়ালিশন শুধু মিত্রসংঘ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে।[৯]
বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা
[সম্পাদনা]
মুজিবনগর সরকারের যুব ও অভ্যর্থনা শিবির বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান চৌধুরীর মতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সরকারের একটা অংশ মিত্রসংঘের সমর্থক ছিল।[১০] যুদ্ধ চলাকালে সেপ্টেম্বরে[১১] মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কাজী জহিরুল কাইয়ুমের মাধ্যমে ভারতের কলকাতায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেলকে পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তিদানের বিনিময়ে দুই অঞ্চলের মধ্যে একটি মিত্রসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের বার্তা প্রেরণ করেছিলেন। এই লক্ষ্যে তিনি মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠকের আয়োজনও করেছিলেন। এই কাজে মোশতাকের সমর্থক ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাহাবুব আলম চাষী যিনি মার্কিনদের মধ্যস্ততায় পাকিস্তানের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য একজন প্রতিনিধি চেয়েছিলেন। তবে প্রেরিত বার্তাটি ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের কাছে ফাঁস হয়ে যায়, তারা মোশতাককে মার্কিন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির এক সদস্যের সাথে কলকাতার একটি হোটেলে সাক্ষাৎ করতে দেখেছিল। ভারত সরকার ও মোশতাকের সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদকে ব্যাপারটা জানানোর পর মুজিবনগর সরকার তাকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের সম্মেলনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অপসারণ করে।[১২][১৩]
মার্কিন নথি অনুযায়ী ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে মিত্রসংঘ গঠনের প্রস্তাবে খন্দকার মোশতাক আহমেদের গোপনে আলোচনার প্রস্তাবে ইয়াহিয়া খান রাষ্ট্রদূত জোসেফ এস ফারল্যান্ডের নিকট সম্মতি প্রদান করেছিলেন।[১৩] যুদ্ধ শেষ হয়ে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ নামে স্বাধীনতা লাভ করার পর জুলফিকার আলি ভুট্টো ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম ডি রজার্সকে দুটি দেশের মধ্যে একটি শিথিলতম মিত্রসংঘ গড়ে তোলার পক্ষে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।[১৪][১৫] অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইয়াহিয়া খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পর তিনি ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের সময় পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে শিথিল গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে একীভূত করার একটি প্রস্তাব দেন।[১৬] এমনকি তিনি ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে চকলালায় শেখ মুজিবুর রহমানকে সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্রের আদলে দুই দেশের মধ্যে একটি শিথিলতম সংঘরাষ্ট্র তথা মিত্রসংঘ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই সময় অর্থ, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা পৃথক না করে মিত্রসংঘের জন্য আলোচনা করা হয়েছিল।[১৬][১৭][১৮] ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে ভুট্টো আলোচনার ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দিলে শেখ মুজিব ব্যাপারটা গোপন রেখে অপেক্ষা করতে বলেন।[১৭] তবে পরবর্তীতে তিনি মিত্রসংঘ গঠনে রাজি হোননি। ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনকে পাঠানো একটি চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ প্রস্তাবিত মিত্রসংঘের ব্যাপারে সতর্ক করে ভুট্টোকে সেটি গঠনের পরিকল্পনা থেকে বিরত রাখার জন্য আহবান করেছিলেন। তার মতে স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তখন বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে দেরি করলে দেশটির পূর্ব জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল।[১৪][১৫] ১৯৭৩ সালে অনুমোদিত পাকিস্তানের সংবিধান বাংলাদেশকে এর একটি প্রদেশ হিসেবে উল্লেখ করলেও[১৫] পরবর্তী বছরের ৮ মে তারিখে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় পরিষদকে পাকিস্তানে যেকোন রাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতা প্রদান করে।[১৯] সাপ্তাহিক বিচিত্রার প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৭৪ সালে তৎকালীন সময়ে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামী পূর্ব পাকিস্তানের সভাপতি গোলাম আজম যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তিদের সাথে বাংলাদেশে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে মিত্রসংঘ বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়ে প্রচারপত্র বাংলাদেশে বিলি করার পরিকল্পনা করেছিলেন।[২০]
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। তৎকালীন সময় গুজব রটেছিল যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ মধ্যকার একটি মিত্রসংঘ গঠিত হতে পারে। ১৮ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেন নতুন রাষ্ট্রপতিকে তার কাছে থাকা চিরকুটের লেখাগুলো পড়ে শোনান যেখানে লেখা ছিল "যদি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করা হয় এবং কোনো দেশের সঙ্গে কনফেডারেশন করা হয়, তাহলে ভারতের সাথে থাকা বৈধ চুক্তির আওতায়[খ] ভারতের সেনাবাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু আপনি যদি নাম পরিবর্তন এবং তথাকথিত কনফেডারেশনের ধারণা থেকে বিরত থাকেন, তাহলে ভারত ১৫ই অগাস্ট থেকে যাই ঘটুক না কেন, তাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা করবে"। চিরকুটের লেখা পড়ে শোনানোর প্রতিক্রিয়ায় মোশতাক বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন।[২১] সমর সেনের সাথে সাক্ষাতের পর মোশতাক মিত্রসংঘ গঠনের প্রচেষ্টার বিপরীতে ঘোষণা করেন যে সরকারি আইন, নীতিমালা ও কার্যক্রমে কোন পরিবর্তন আনা হবেনা।[২২] ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান হওয়ার পরে জিয়াউর রহমানের উপর একটি গোষ্ঠী মিত্রসংঘ বাস্তবায়নের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের রাষ্ট্রপতিত্বকালে দাবিটির জন্য তৎকালীন বিমানবাহিনী প্রধান মুহাম্মদ গোলাম তাওয়াব ও জামায়াতে ইসলামী পূর্ব পাকিস্তানের কর্মীরা গণসমাবেশের পাশাপাশি বিক্ষোভের আয়োজন করে বলে অভিযোগ উঠেছিল।[২৩] দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নত হওয়ার পটভূমিতে ২০২৫ সালে পাকিস্তানি সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাভেদ রানা ইসলামাবাদের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের একটি মিত্রসংঘ বাস্তবায়নের নীলনকশা তুলে ধরেন।[২৪] এছাড়া পাকিস্তান মুসলিম লীগের (এন) রাজনীতিবিদ আবদুল কাইয়ুম পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মিত্রসংঘ গঠনের প্রস্তাব করেন, যেখানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে সামরিক বিষয়ে এবং পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছ থেকে বাণিজ্যিক বিষয়ে সহায়তা পেতে পারবে।[২৫]
টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ এর আগে দলটি ছয় দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তানের প্রদেশগুলোর স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিল।
- ↑ বৈধ চুক্তি বলতে বাংলাদেশ–ভারত মৈত্রী চুক্তি ১৯৭২ বোঝানো হয়েছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- 1 2 গুল, আয়াজ (২০১৪)। "CHARTER OF INDEPENDENCE: A CRITICAL STUDY OF MUJIB'S SIX POINT PROGRAMME" (পিডিএফ)। জার্নাল অফ দ্য পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি হিস্ট্রিক্যাল সোসাইটি (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ (১)। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়: ৫৯–৭৪।
- ↑ গোস্বামী, অমিত (১৬ ডিসেম্বর ২০২৩)। "বিজয় দিবসের জিজ্ঞাসা : পাকিস্তান ভাঙার জন্য দায়ী কে?"। ঢাকা পোস্ট। ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ এহতিশাম, এস আখতার (১৯৯৮)। A Medical Doctor Examines Life on Three Continents: A Pakistani View (ইংরেজি ভাষায়)। আলগোরা পাবলিশিং। পৃ. ১০২। আইএসবিএন ৯৭৮০৮৭৫৮৬৬৩৪৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ ইকবাল, আনোয়ার (৭ জুলাই ২০০৫)। "Sheikh Mujib wanted a confederation: US papers"। ডন (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- ↑ সাজেন, শামসুদ্দোহা (১১ মার্চ ২০২৪)। "Indomitable March: Bhutto's urgent appeal to Mujib"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- ↑ ইয়েচুরি, আশীষ (৩০ ডিসেম্বর ২০১৩)। "Even in 1971, Awami League wasn't stating it wanted independence: Srinath Raghavan"। টাইমস অফ ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- ↑ আবু মো. দেলোয়ার হোসেন এবং এ.টি.এম যায়েদ হোসেন (২০১২)। "অসহযোগ আন্দোলন ১৯৭১"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর (সম্পাদকগণ)। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন ৯৮৪৩২০৫৯০১। ওসিএলসি 883871743। ওএল 30677644M।
- ↑ হায়দার, রশীদ (১৯৮৯) [প্রথম প্রকাশ: ১৯৮৫]। অসহযোগ আন্দোলন: একাত্তর। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃ. ৯৫।
- ↑ হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট (বাংলাদেশ অংশ)। হুমায়ুন হাসান কর্তৃক অনূদিত। বাঁধন পাবলিকেশন্স। ২০১১। পৃ. ৫৭।
- ↑ খোকন, সালেক (২৩ জুন ২০২৩)। "জুন ১৯৭১ : 'জনযুদ্ধ' শুরু, খন্দকার মোশতাকদের ষড়যন্ত্রও শুরু"। ডয়েচে ভেলে। ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ "বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি"। জনকণ্ঠ। ১১ জানুয়ারি ২০১৫। ২৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- ↑ লিটন, শাখাওয়াত (১৪ আগস্ট ২০১৫)। "Mushtaque, a hero!"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৪ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- 1 2 পারভেজ, আজিজুল (১ ডিসেম্বর ২০২১)। "একাত্তরেও ষড়যন্ত্র: ধরা পড়ে গৃহবন্দী ছিলেন খন্দকার মোশতাক"। ঢাকা প্রকাশ। ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০২৪।
- 1 2 খান, মিজানুর রহমান (৯ জানুয়ারি ২০২৪)। "ভুট্টোর কনফেডারেশনে বঙ্গবন্ধুর না"। দৈনিক শিক্ষা। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- 1 2 3 সাইয়িদ, আবু (২০১২) [২০১১]। একাত্তরে বন্দী মুজিব পাকিস্তানের মৃত্যুযন্ত্রণা। ঢাকা: সূচীপত্র। পৃ. ১২১, ১২৩, ১২৭।
- 1 2 আহমেদ, ইনাম; লিটন, শাখওয়াত (১৬ ডিসেম্বর ২০১৫)। "After 1971 defeat, Bhutto dreamt of confederation"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- 1 2 ওয়ালপার্ট, স্ট্যানলি (১৯৯৩)। "President Bhutto "Picks Up the Pieces" (December 1971-July 1972)"। Zulfi Bhutto of Pakistan: His Life and Time (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃ. ১৭৪–১৭৫।
- ↑ "Bhutto Said to Offer East a Loose Union"। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭১। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- ↑ ইসলাম, এম শাহীনুর (২৭ আগস্ট ২০২১)। "বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ॥ পাকিস্তানের তৎপরতা"। জনকণ্ঠ। ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ শাহাদত চৌধুরী, সম্পাদক (১৭ এপ্রিল ১৯৮১)। "'একাত্তরে আমরা ভুল করিনি' – গোলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি"। সাপ্তাহিক বিচিত্রা।
- ↑ ইসলাম, সায়েদুল (১৪ আগস্ট ২০২৩)। "সপরিবারে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পরের দুই সপ্তাহে যা ঘটেছিল"। বিবিসি। ১৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- ↑ খান, আবেদ (২ অক্টোবর ২০১৯)। "মোশতাকের মীরজাফরি চাল"। দৈনিক জাগরণ। ৫ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- ↑ একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়। মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র। ১৯৯২ [১৯৮৭]। পৃ. ২৬।
- ↑ "Blueprint of Pakistan-Bangladesh Confederation to Counter India"। দ্য কাউন্টার ন্যারেটিভ (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ মে ২০২৫।
- ↑ খান, ইফতিখার আর (১৯ মে ২০২৫)। "PML-N leader proposes confederation with Bangladesh"। ডন (ইংরেজি ভাষায়)।