যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত
যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত | |
|---|---|
শ্রী যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত | |
| জন্ম | ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮৫ |
| মৃত্যু | ২৩ জুলাই, ১৯৩৩ |
| জাতীয়তা | বাঙালি |
| উপাধি | দেশপ্রিয় |
| আন্দোলন | ভারতীয় জাতীয়তাবাদ |
যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত (২২ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮৫ — ২৩ জুলাই, ১৯৩৩) একজন প্রথম সারির কংগ্রেস নেতা ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]যতীন্দ্রমোহনের জন্ম চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরমা ইউনিয়নে[১]। পিতা যাত্রামোহন সেন ছিলেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী ও বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য। তিনি ১৯০২ সালে হেয়ার স্কুল হতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় করেন ও প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৪ সালে বিলেতে যান উচ্চশিক্ষার্থে। ১৯০৮ এ কেমব্রিজ হতে বি.এ. এবং ১৯০৯ সালে ব্যারিস্টারি পাশ করেন। এখানে তার আলাপ ও প্রণয় হয় ইংরেজ মহিলা নেলী গ্রে'র সাথে। যিনি যতীন্দ্রমোহনকে বিবাহ করে নেলী সেনগুপ্তা হন। নেলী সেনগুপ্তা নিজেও অসামান্য সমাজকর্মী ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে ভারতে সমুজ্জ্বল হয়েছেন।[২]
আইনজীবী
[সম্পাদনা]১৯১০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেন এবং আইনজীবী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। মাঝে কিছুদিন রিপন কলেজে (অধুনা সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজ) আইনের শিক্ষকতা করেছেন।[১] অগ্নিযুগের বহু বিপ্লবীকে নিশ্চিত ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচিয়ে এনেছেন তার অসামান্য দক্ষতায়[৩]। ১৯২৩ সালে দ্বিতীয় আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় তার কৃতিত্বপূর্ণ সওয়ালে সাতজন বিপ্লবী মুক্ত হন। স্বেচ্ছায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পক্ষ নিয়ে আদালতে লড়াই করতেন।[৪]
স্বাধীনতা আন্দোলন
[সম্পাদনা]১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে ব্যারিস্টারি পেশা ত্যাগ করেন। বর্মা অয়েল কোম্পানি ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ধর্মঘট পরিচালনার দায়ে তার সস্ত্রীক কারাদণ্ড হয়। ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এই শ্রমিক ধর্মঘট ছিল সর্বপ্রথম বৃহত্তর ধর্মঘট। ধর্মঘটীদের পরিবার প্রতিপালনের জন্যে সেযুগে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সাধারণ মানুষ তাকে দেশপ্রিয় উপাধিতে ভূষিত করে। ইনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সশস্ত্র বিপ্লবীদের প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল ছিলেন। জনদরদী যতীন্দ্রমোহন কে চট্টগ্রামের মানুষ মুকুটহীন রাজা বলে অভিহিত করত। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ভারত থেকে বর্মাকে বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে বক্তৃতা দিয়ে গ্রেপ্তার হন। ১৯২২-২৩ কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সভাপতি ছিলেন তারপর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের স্বরাজ্য পার্টিতে যোগ দেন। পাঁচবার কলকাতার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সমিতির সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। চট্টগ্রামের ভূমিপুত্র হিসেবে সেখানে নানা সামাজিক কাজকর্মে তিনি ছিলেন অগ্রণী সেনানী। ১৯৩১ সালে চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যায়, ১৯২৬ এ কলকাতায়, ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামায় ত্রাণকার্যের পুরোভাগে থাকেন।[১][৫]
চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহে ভূমিকা
[সম্পাদনা]নাগরখানা খণ্ডযুদ্ধ ও সরকারি টাকা লুটের মামলায় মাস্টারদা সূর্য সেন, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তীর হয়ে মামলা পরিচালনা করে তাদের মুক্ত করেন। বিপ্লবী প্রেমানন্দ দত্তকে পুলিশ ইনস্পেকটর প্রফুল্ল রায় হত্যা মামলায় নির্দোষ সাব্যস্ত করা তার অপর কৃতিত্ব। বস্তুত চট্টগ্রাম বিদ্রোহের বহু সৈনিককে তিনি ফাঁসির হাত থেকে বাঁচিয়ে দেন আইনের সাহায্যে। ফৌজদারী বিষয়ে তার সমকক্ষ আইনজ্ঞ ও বাগ্মী ভারতে কমই ছিল। জালিয়ানওয়ালাবাগে রাজদ্রোহমূলক বক্তৃতা দেওয়ার পরে কারারুদ্ধ হন এবং মুক্তি পেয়ে বিলেতে যান। চট্টগ্রামে পুলিশি অত্যাচার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিলেতে গিয়ে জোরালো প্রতিবাদ করেন। তার দেওয়া তথ্য, ছবি ইত্যাদির ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার নেলসন অপসারিত হন। এছাড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ক্রেগ অবসর নিতে বাধ্য হন। হান্টার বিলেতে পালান, পুলিশ সুপার স্যুটার আত্মহত্যা করেন। ফলত সরকারের রোষানল তার ওপর পড়ে। কমিশনার টেগার্ট তখন বিলেতে ছিলেন। তিনি সরকারকে জানান যতীন্দ্রমোহন অহিংসবাদী নন। তিনি সশস্ত্র বিপ্লবীদের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগকারী ও মদতদাতা। পুলিশ দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে বোম্বাই বন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করে যারবেদা জেল ও পরে দার্জিলিং এ অন্তরীণ করে পাঠায়। অসুস্থ হয়ে পড়লেও উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে দেয়নি পুলিশ।[৩]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]চিকিৎসা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তাকে রাঁচিতে স্থানান্তরিত করা হয়। ২৩ জুলাই, ১৯৩৩ এ তিনি মারা যান।[৩][৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- 1 2 3 বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ। "সেনগুপ্ত, যতীন্দ্রমোহন"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
- ↑ "সর্বভারতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসে নেলী সেনগুপ্তা"। দৈনিক পূর্বকোন। ২৩ অক্টোবর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- 1 2 3 প্রসাদ দাস মুখোপাধ্যায়, সূর্যসেন ও স্বাধীনতা সংগ্রাম (১৯৯৫)। চট্টগ্রাম সশস্ত্র বিপ্লবে দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহনের ভূমিকা। বহরমপুর: সূর্যসেনা প্রকাশনী। পৃ. ৭৪, ৭৫।
- ↑ অনন্ত সিংহ (১৯৬৮)। অগ্নিগর্ভ চট্টগ্রাম (প্রথম খন্ড)। কলকাতা: বিদ্যোদয় লাইব্রেরি প্রা: লি:। পৃ. ২০৩।
{{বই উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অতিরিক্ত বিরামচিহ্ন (লিঙ্ক) - 1 2 প্রথম খণ্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃ. ৪৩৪। আইএসবিএন ৮১-৮৫৬২৬-৬৫-০।
{{বই উদ্ধৃতি}}:|প্রথমাংশ=প্যারামিটারে সাধারণ নাম রয়েছে (সাহায্য)
- ১৮৮৫-এ জন্ম
- পূর্ববঙ্গে জন্ম
- ১৯৩৩-এ মৃত্যু
- পূর্ব বাংলা থেকে ভারতীয় স্বাধীনতা কর্মী
- পূর্ববঙ্গের ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী বিপ্লবী
- বাংলাদেশী বিপ্লবী
- চট্টগ্রাম জেলার ব্যক্তি
- চট্টগ্রাম জেলার রাজনীতিবিদ
- ভারতীয় আইনজীবী
- ভারতীয় জাতীয়তাবাদী
- বাঙালি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী
- প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় আইনজীবী
- কলকাতার মহানাগরিক
- ২০শ শতাব্দীর ভারতের মেয়র