বিষয়বস্তুতে চলুন

১৮৮৫-এর মানিকগঞ্জ ভূমিকম্প

১৮৮৫-এর মানিকগঞ্জ ভূমিকম্প
১৮৮৫-এর মানিকগঞ্জ ভূমিকম্প বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
১৮৮৫-এর মানিকগঞ্জ ভূমিকম্প
ইউটিসি সময়১৮৮৫-০৭-১৪ ০০:৩০:৫২
স্থানীয় তারিখ১৪ জুলাই ১৮৮৫; ১৪০ বছর আগে (1885-07-14)
স্থানীয় সময়০৬:২৪:১২ (কলকাতা)
মাত্রা৬.৯-৭ এমডব্লিউ[]
গভীরতা৭০ কিমি (৪৩ মা)[]
ভূকম্পন বিন্দু২৪°০০′ উত্তর ৯০°০০′ পূর্ব / ২৪.০০° উত্তর ৯০.০০° পূর্ব / 24.00; 90.00
সর্বোচ্চ তীব্রতাVIII (গুরুতর)[]
হতাহত৪৭ থেকে ৭৫ জন নিহত[][]

১৮৮৫-এর ভূমিকম্প হলো ১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাই তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে সংঘটিত একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। এটি ১৮৮৫-এর বাংলার ভূমিকম্প, বেঙ্গল ভূমিকম্প বা ১৮৮৫-এর মানিকগঞ্জ ভূমিকম্প নামে পরিচিত।[] ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল বর্তমান বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া-বালিয়াটির নিকটবর্তী একটি স্থানে। উৎপত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.৯-৭।[][]

ভূমিকম্প

[সম্পাদনা]

১৪ জুলাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রা ও মুসলমানদের ঈদ-ফিতরের দিন[] সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ[] ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বর্তমান বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া-বালিয়াটির নিকটবর্তী একটি স্থানে।[] ভূমিকম্পটি ভূ-বিচ্যুতিরেখা বরাবর সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়।[][] পশ্চিমে ছোট নাগপুর, পূর্বে আসাম, মণিপুর, বার্মা ও উত্তরে সিকিম-ভুটানেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়।[]

মূল ভূমিকম্পের পূর্বে ১৮৮৫ সালের ২৫ জুন কলকাতা ও দার্জিলিং থেকে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর জানা যায়, যাকে মূল ভূমিকম্পের "ফোরশক" হিসেবে গণ্য করা হয়।[] ১৪ জুলাইয়ের মূল ভূমিকম্পের পরে ডিসেম্বর নাগাদ অনেকগুলো ছোট ছোট ভূমিকম্প (আফটারশক) অনুভূত হয়। ২১ জুলাই থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১টি ভূকম্পন নথিবদ্ধ করা হয়।[] এর মধ্যে ২৪ জুলাইয়ের অনুভূত ভূকম্পনটি ছিল তুলনামূলক শক্তিশালী। এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ষ্ঠ শ্রেণির (এমএম) এবং উৎপত্তিস্থল ছিল বগুড়া জেলায়।[] ভূগর্ভস্থ "যমুনা ফাটল" বা মধুপুর চ্যুতিকে এই ভূমিকম্পের জন্য দায়ী করা হয়।[]

ক্ষয়ক্ষতি

[সম্পাদনা]

ভূমিকম্প ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়াঢাকা অঞ্চলে সবচেয়ে অনুভূত হয়, ফলে এই অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানীর পরিমাণ ছিল বেশি।[][][১০] এছাড়া বগুড়া জেলাতেও গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়।[১০] ময়মনসিংহ জেলার শেরপুর শহর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। শহরের ১০০টির মতো দালান বিধ্বস্ত হয় এবং ৩৫ জন মানুষ মারা যান।[] এছাড়া "আজিমগঞ্জ" নামের একটি স্থানে ১১ জনসহ[১১] ঢাকা, বগুড়া ইত্যাদি স্থানে মোট ৪৭ থেকে ৭৫ জনের প্রাণহানি ঘটে বলে মনে করা হয়।[][]

ভূমিকম্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের অন্যতম ছিল তৎকালীন পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ শহর। শহরের ইট-নির্মিত দালানকোঠার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।[১২] শহরের একটি পাটকলের চিমনি গুড়িয়ে যায়। তবে ঈদের ছুটি চলায় এই ঘটনায় কোনো প্রাণহানী ঘটেনি। তবে কিছু বাড়িঘর ধ্বসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।[১১] সিরাজগঞ্জের কয়েকটি জায়গায় মাটিতে ফাটল দেখা যায় এবং ফাটল থেকে বালুমিশ্রিত ভূগর্ভস্থ পানি উৎসরিত হয়।[] বগুড়া শহরের কাচারি, সার্কিট হাউজসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শহরে দাপ্তরিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য অস্থায়ী তাবু স্থাপন করা হয়।[]

ভবিষ্যৎ ঝুঁকি মূল্যায়ন

[সম্পাদনা]

মধুপুর গড় অঞ্চলে সংগঠিত ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশের বর্তমান রাজধানী ঢাকা থেকে ৫০ কিলোমিটারের ভেতর। ঢাকা শহরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলের কাছাকাছি এর উপকেন্দ্রের অবস্থান এবং শক্তিমাত্রা বর্তমানে বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকির মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৯৭ সালে আসাম ভূমিকম্প পূর্ব বাংলার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে। ফলে এই ধরনের শক্তিশালী ভূমিকম্প আবার সংঘটিত হলে ঢাকাসহ এই অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।[১৩] মার্কিন ভূতত্ত্ব জরিপ বিভাগের জন ডব্লিউ হুইটনির মতে, পূর্ব ভারতীয় পাতের সীমায় প্রতি ১৩৫ বছরের চক্রে একটি প্রবল অথবা সাতটি শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।[] পাশাপাশি মধুপুর গড় অঞ্চলে সংঘটিত ১৮৮৫-এর ভূমিকম্পের পর ১৩০ বছরের চক্রে আরেকটি অনুরূপ শক্তিশালী ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের নগর বিশেষজ্ঞগণ ২০১৫-২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা জানান।[] ঢাকা শহরের অপরিকল্পিত আবাসন ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের ফলে ১৮৮৫-এর ভূমিকম্পের মতো ঢাকা শহরের নিকটবর্তী কোনো স্থানে উদ্ভূত ভূমিকম্পে ঢাকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ও ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. 1 2 অ্যাম্ব্রাসেইস, এন এন; ডগলাস, জে (২০০৪)। "Magnitude calibration of north Indian earthquakes"জিওফিজিক্যাল জার্নাল ইন্টারন্যাশনাল (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫৯ (১): ১৬৫-২০৬। ডিওআই:10.1111/j.1365-246X.2004.02323.x
  2. 1 2 3 4 5 6 7 মিডলমিস, সিএস (১৮৮৫)। "Report on the Bengal Earthquake of July 14 1885"। রেকর্ডস অব দ্য জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ (৪): ২০০-২২১।
  3. 1 2 3 দাশগুপ্ত, সুজিত; মুখোপাধ্যায়, বাসব (২০১৯)। "Revisiting Two Damaging Indian Earthquakes of 1885: Kashmir and Bengal"। জার্নাল অব দ্যা জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। ৯৩: ২৬৩-২৬৮। ডিওআই:10.1007/s12594-019-1172-2
  4. 1 2 3 গুপ্ত, জেএন (১৯১০)। ডিস্ট্রিক্ট গ্যাজেটিয়ার্স অব ইস্টার্ন বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম: বগুড়া। এলাহাবাদ: পায়োনিয়ার প্রেস। পৃ. ৭৪।
  5. 1 2 মার্টিন, ডব্লিউ; জেলিগা (২০১০)। "A catalog of Felt Intensity Data for 570 Earthquakes in India from 1636 to 2009"বুলেটিন অব দ্য সিসমোলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকা১০০ (২): ৫৬২-৫৬৯। ডিওআই:10.1785/0120080328
  6. 1 2 3 4 খান, আফতাব আলম (২৮ মে ২০০৫)। "The 1885 Bengal Earthquake: How prepared are we for any recurrence?"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০২৫
  7. 1 2 সিফাতুল কাদের, চৌধুরী; আফতাব আলম, খান (২ মার্চ ২০১৫)। "ভূমিকম্প"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০২৫{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: ইউআরএল-অবস্থা (লিঙ্ক)
  8. 1 2 3 4 মেডলিকট, এইচবি (১৮৮৫)। "Preliminary notice of the Bengal Earthquake of 14th July 1885"। রেকর্ডস অব দ্য জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ (৩): ১৫৬-১৫৮।
  9. চন্দ্র, ইউ (১৯৭৭)। "Earthquakes of Peninsular India—A Seismotectonic Study"। বুলেটিন অব দ্য সিসমোলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকা (ইংরেজি ভাষায়)। ৬৭ (৫): ১৩৮৭-১৪১৩।
  10. 1 2 ফেরদৌসী, তাহমিনুর; রহমান (২০১০)। "Earthquake in Bangladesh: How much we are prepared to face it?"বাংলাদেশ জার্নাল অব প্যাথলজি (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫ (১): ১।
  11. 1 2 "The Earthquake in Bengal"। গ্লাসগো ইভনিং পোস্ট (ইংরেজি ভাষায়)। ল্যাকার্নশায়ার, স্কটল্যান্ড। ২১ জুলাই ১৮৮৫। পৃ. ৪।
  12. ও'ম্যালি, এলএসএস (১৯২৩)। বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গ্যাজেটিয়ার্স: পাবনা। দ্য বেঙ্গল সেক্রেটারিয়েট বুক ডিপো। পৃ. ৪৬।
  13. বিলহ্যাম, রজার; ইংল্যান্ড, ফিলিপ (২০০১)। "Plateau 'pop-up' in the great 1897 Assam earthquake"নেচার (ইংরেজি ভাষায়)। ৪১০: ৮০৬-৯। ডিওআই:10.1038/35071057