গোলাম মুহাম্মদ বাস্তনভি
গোলাম মুহাম্মদ বাস্তনভি | |
|---|---|
| ১২ তম আচার্য, দারুল উলুম দেওবন্দ | |
| কাজের মেয়াদ ১০ জানুয়ারি ২০১১ – ২৪ জুলাই ২০১১ | |
| পূর্বসূরী | মারগুবুর রহমান বিজনুরী |
| উত্তরসূরী | আবুল কাসেম নোমানী |
| ব্যক্তিগত বিবরণ | |
| জন্ম | ১ জুন ১৯৫০ বাস্তন, সুরাত জেলা, গুজরাত |
| মৃত্যু | ৪ মে ২০২৫ |
| জাতীয়তা | ভারতীয় |
| প্রাক্তন শিক্ষার্থী | দারুল উলুম দেওবন্দ |
গোলাম মুহাম্মদ বাস্তনভি (১ জুন ১৯৫০ – ৪ মে ২০২৫), যিনি গোলাম মোহাম্মেদ ভাস্তানভি নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন ভারতীয় ইসলামিক পণ্ডিত এবং শিক্ষাবিদ। তিনি ঐতিহ্যবাহী ইসলামিক শিক্ষার সাথে আধুনিক বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টার জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি মহারাষ্ট্রের আক্কলকুয়ায় জামিয়া ইসলামিয়া ইশাতুল উলুমের প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানে ভারতের প্রথম সংখ্যালঘু-মালিকানাধীন মেডিকেল কলেজ অবস্থিত, যা ভারতীয় চিকিৎসা পরিষদ (এমসিআই) কর্তৃক স্বীকৃত। ভাস্তানভি ২০১১ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের উপাচার্য হিসেবেও অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[১]
২০১১ সালে তিনি নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করলে, তাঁকে দারুল উলূম দেওবন্দের আচার্যের দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে পরে বাস্তনবী তাঁর অপসারণের বিষয়টি নিয়ে আদালতে না যাবার সিদ্ধান্ত নেন।[২][৩][৪][৫][৬][৭]
প্রাথমিক ও শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]গোলাম মোহাম্মদ ভাস্তানভির জন্ম ১৯৫০ সালের ১ জুন গুজরাটের সুরাট জেলার কোসাদিতে। ১৯৫২ বা ১৯৫৩ সালে তার পরিবার ভাস্তানে স্থানান্তরিত হয়, যেখান থেকে তার পদবি ভাস্তানভি এসেছে। ভাস্তানভি কোসাদির মাদ্রাসা কুওয়াত-উল-ইসলামে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন, যেখানে তিনি কুরআন মুখস্থ করেন।
পরে তিনি বরোদার মাদ্রাসা শামস-উল-উলুমে অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৬৪ সালে গুজরাটের তাডকেসার (বানানান্তরে তাডকেশ্বর)-এর মাদ্রাসা ফালাহ-এ-দারাইনে আরও পড়াশোনা করেন। তিনি সেখানে আট বছর অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৭২ সালের শুরুতে আহমদ বেমত, আবদুল্লাহ কাপোদ্রাবি, শের আলী খান আফগানি এবং জুলফিকার আলীর মতো পণ্ডিতদের অধীনে তার পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।
১৯৭২ সালের শেষের দিকে, ভাস্তানভি উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরের মাজাহির উলুমে ভর্তি হন। সেখানে তিনি মুহাম্মদ ইউনুস জুনপুরীর মতো পণ্ডিতদের অধীনে হাদিসসহ উন্নত ইসলামিক বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে তার শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ইসলামিক শিক্ষার পাশাপাশি ভাস্তানভি এমবিএ ডিগ্রিও অর্জন করেছিলেন।
১৯৭০ সালে, ফালাহ-এ-দারাইনে অধ্যয়নকালে, তিনি জাকারিয়া কান্ধলভির সাথে একটি সংস্কারমূলক সম্পর্ক স্থাপন করেন। ১৯৮২ সালে কান্ধলভির মৃত্যুর পর, তিনি সিদ্দিক আহমদ বান্ডভির কাছ থেকে আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা লাভ করেন, যিনি পরবর্তীতে তাকে সুফিবাদে দীক্ষিত করেন। তিনি ইউনুস জুনপুরীর কাছ থেকেও সুফিবাদে দীক্ষা লাভ করেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]পড়াশোনা শেষ করার পর, ভাস্তানভি দশ দিনের জন্য সুরাট জেলার একটি গ্রাম বোধানে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে ১৯৭৩ সালে, তিনি ভারুচের দারুল উলুম কান্থারিয়ায় যোগদান করেন, যেখানে তিনি ফার্সি এবং মধ্যবর্তী স্তরের ইসলামিক বিজ্ঞান পড়াতেন।
১৯৭৯ সালে, তিনি মহারাষ্ট্রের আক্কলকুয়ায় জামিয়া ইসলামিয়া ইশাতুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিকভাবে, প্রতিষ্ঠানটি সীমিত সম্পদ নিয়ে পরিচালিত হত, একটি ছোট স্থানে ছয়জন ছাত্র ও একজন শিক্ষক নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে, এটি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয় এবং ইসলামিক ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ভাস্তানভি কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য স্থায়ীভাবে আক্কলকুয়ায় চলে আসেন। তখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এর আচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিষ্ঠানটিতে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ব্যাচেলর অফ এডুকেশন (বি.এড.) এবং ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (ডি.এড.) কলেজ, সেইসাথে বৃত্তিমূলক প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এমসিআই কর্তৃক স্বীকৃত ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মেসি এবং একটি মেডিকেল কলেজের মতো পেশাদার কোর্সও এখানে দেওয়া হয়। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটি আইটি, অফিস ম্যানেজমেন্ট, টেইলারিং এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মতো ক্ষেত্রে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এই মিশ্র শিক্ষা মডেলের লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় এবং সমসাময়িক সামাজিক উভয় ভূমিকার জন্য প্রস্তুত করা।
ভাস্তানভি জামিয়া ইসলামিয়া ইশাতুল উলুম প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার পাশাপাশি ভারত জুড়ে বিভিন্ন শিক্ষা ও কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তিনি সারা দেশে এই এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
১৯৯৮ সালে (১৪১৯ হিজরি), ভাস্তানভি দারুল উলুম দেওবন্দের গভর্নিং কাউন্সিলের (মজলিস-এ-শুরা) সদস্য হন এবং তার মেয়াদে উপাচার্য হিসেবেও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কাউন্সিলর ছিলেন।
দারুল উলুম দেওবন্দের উপাচার্য পদ ও চ্যালেঞ্জ
[সম্পাদনা]গোলাম মোহাম্মদ ভাস্তানভি ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি দারুল উলুম দেওবন্দের উপাচার্য নির্বাচিত হন, যা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে একটি সংস্কারবাদী পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তবে, ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে তার আপোষমূলক মন্তব্য বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার জন্ম দেয়। এই বিবৃতিগুলিকে মাদ্রাসার ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করা হয়েছিল, যার ফলে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ দেখা দেয়। ক্রমবর্ধমান চাপ ও অভ্যন্তরীণ মতভেদের মুখে ২০১১ সালের ২৩ জুলাই ভাস্তানভিকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
অপসারণের পর, ভাস্তানভি বলেছিলেন যে "কোন দোষ ছাড়াই তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে" এবং তার মন্তব্যগুলিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের অগ্রগতিতে মনোযোগ দেওয়া এবং প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার জন্য সংস্কার আনা। তার মতে, সংস্কারবিরোধী উপাদান এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিরোধিতার কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]ভাস্তানভি ৭৫ বছর বয়সে ২০২৫ সালের ৪ মে আক্কলকুয়ায় মারা যান।[৮][৯]
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Who is Ghulam Mohammed Vastanvi?"। India Today। ২০ জানুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "Maulana Ghulam Mohammed Vastanvi removed as Vice Chancellor of Darul Uloom Deoband"। Naziya Alvi। India Today। ২৪ জুলাই ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "Q&A: Maulana Ghulam Mohammad Vastanvi"। Gyan Varma। Business Standard। ২৫ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "Ghulam Mohammad Vastanvi: A Victim Of Super-Caste And Family Hegemony In Deoband? – Analysis"। Eurosaia Review। ১৩ আগস্ট ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "Vastanvi to focus on Rs100cr college"। Yagnesh Bharat Mehta। The Times of India। ২৫ জুলাই ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "Mullah in Debate of Tradition vs. Modern Schooling"। New York Times। ২০ মার্চ ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "Vastanvi a success story in Maharashtra town"। Yagnesh Bharat Mehta। The Times of India। ২৯ জানুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ নিউজ, সময়। "মাওলানা বুস্তানবীর ইন্তেকাল উম্মাহর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি: দেওবন্দের মুহতামিম | ধর্ম"। Somoy News। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০২৫।
- ↑ Editor। "মাওলানা বুস্তানবীর ইন্তেকাল উম্মাহর জন্য বিশাল ক্ষতি: দেওবন্দের মুহতামিম"। www.ourislam24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০২৫।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}:|শেষাংশ=প্যারামিটারে সাধারণ নাম রয়েছে (সাহায্য)