ভারতের প্রথম চন্দ্র অভিযান হল চন্দ্রযান ১। এটি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা কর্তৃক ২২ অক্টোবর ২০০৮ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল এবং ২০০৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত পরিচালিত হয়েছিল। এই মিশনে একটি চন্দ্র অরবিটার এবং একটি ইমপ্যাক্টর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই অভিযানটি ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণার ছিল, কারণ ভারত চন্দ্র অন্বেষণের জন্য সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তি গবেষণা এবং বিকাশ করেছিল। ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর যানটি সফলভাবে চন্দ্র কক্ষপথে প্রবেশ করানো হয়েছিল। [৩][৪]ভারতই প্রথম দেশ যারা চাঁদেজলের উপস্থিতি প্রমাণ করেছিল। চন্দ্রযান-১ মহাকাশযানে অবতরণকারী মুন ইমপ্যাক্ট প্রোব (MIP) এর মাধ্যমে এটি অর্জন করা হয়েছিল। MIP চাঁদে জলের, বিশেষ করে জলের বরফের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে।
অরবিটার কার্যকরী; অবতরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে (সফটওয়্যার ত্রুটির কারণে) ল্যান্ডারটি চাঁদের পৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হয়। [৫]
চন্দ্রযান-২, ২২ জুলাই ২০১৯ তারিখে ভারতীয় সময় দুপুর ২:৪৩ মিনিটে (০৯:১৩ UTC) সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্রের দ্বিতীয় লঞ্চ প্যাড থেকে চাঁদে একটি LVM3 (পূর্বে GSLV Mk III নামে পরিচিত) মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। পরিকল্পিত বা বিট অনুসারে এর পেরিজি ১৬৯.৭কিমি এবং ৪৫৪৭৫ এর এপোজিকিমি। এটিতে একটি চন্দ্র অরবিটার, ল্যান্ডার এবং রোভার রয়েছে, যা সবই ভারতে তৈরি। মূল বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য হল চাঁদের জলের অবস্থান এবং প্রাচুর্যের মানচিত্র তৈরি করা।
১০ নভেম্বর ২০২৩ (অরবিটার চন্দ্রের প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে গেছে)
চন্দ্রযান-৩ শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ১৪ জুলাই ২০২৩ তারিখে ভারতীয় সময় দুপুর ২:৩৫ (UTC +৫:৩০) LVM3 M4 দ্বারা উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। মূল বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য হল চন্দ্রপৃষ্ঠে নিরাপদ অবতরণ এবং ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে এন্ড-টু-এন্ড ক্ষমতা প্রদর্শন করা। চন্দ্রযান-৩ ২৩শে আগস্ট ২০২৩ তারিখে ১৮:০৫ IST (UTC +৫:৩০) তে সফলভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরুতে 'সফট ল্যান্ডিং' করে অবতরণ করে। প্রযুক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য, বিক্রম ল্যান্ডারের উপর হপ পরীক্ষা চালানো হয়েছিল এবং চন্দ্রযান-৩ এর প্রোপালশন মডিউল (PM) চাঁদের চারপাশের কক্ষপথ থেকে পৃথিবীর চারপাশের কক্ষপথে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, যেখানে এটি ২২ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত কাজ করেছিল। [৬][৭] এই অভিযানের মধ্যে দিয়ে, ভারত বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করে। ভারত বিশ্বের চতুর্থ দেশ (সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর) যারা চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এই অভিযান মানুষের চন্দ্র অনুসন্ধান ও অভিযানের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। ২৩ আগস্ট -চন্দ্রপৃষ্ঠে চন্দ্রযান ৩ -এর অবতরণের এই ঐতিহাসিক দিনটি প্রতি বছর গৌরবের সঙ্গে ভারতেজাতীয় মহাকাশ দিবস হিসেবে পালিত হয়।
আদিত্য-এল১ হল প্রথম ভারতীয় অবসারভেটরি শ্রেণীর মিশন যা সৌর করোনাগ্রাফ ব্যবহার করে সৌর করোনা এবং কাছাকাছি UV যন্ত্র ব্যবহার করে ক্রোমোস্ফিয়ার অধ্যয়ন করে। সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাদের উত্তরণের সময় ইন-সিটু পেলোড সৌর ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ করার সময় এক্স-রে স্পেকট্রোস্কোপিক যন্ত্রগুলি ফ্লেয়ার স্পেকট্রা প্রদান করবে। [৮] ৬ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখে, ভারতের প্রথম সৌর অভিযান, আদিত্য-এল১ মহাকাশযান, পৃথিবী থেকে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে প্রথম সূর্য-পৃথিবী ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান বিন্দু (এল১) এর চারপাশে সফলভাবে তার চূড়ান্ত কক্ষপথে প্রবেশ করেছে। [৯]
মার্স অরবিটার মিশন (MOM), যাকে মঙ্গলযানও বলা হয়, একটি মহাকাশযান যা ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০১৪ সাল থেকে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে ঘুরছে। এটি ৫ নভেম্বর ২০১৩ সালে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) দ্বারা উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। এটি ভারতের প্রথম আন্তঃগ্রহীয় মহাকাশ অভিযান এবং সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচি, নাসা এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার পরে ইসরো চতুর্থ মহাকাশ সংস্থা হিসেবে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছালো। ভারত হলো প্রথম এশীয় দেশ যারা মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছায় এবং বিশ্বের প্রথম দেশ যারা প্রথম প্রচেষ্টাতেই তা করেছে।[১০][১১]
অ্যাস্ট্রোস্যাট হল একটি ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান উপগ্রহ মিশন যা ইসরো কর্তৃক ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, যা এক্স-রে এবং অতিবেগুনী বর্ণালী পটি একই সাথে মহাজাগতিক বস্তু এবং মহাজাগতিক উৎসের বহু-তরঙ্গদৈর্ঘ্য পর্যবেক্ষণ সক্ষম করেছিল। বৈজ্ঞানিক পেলোডগুলি দৃশ্যমান (3500–6000 Å...), UV (1300–op Å...), নরম এবং শক্ত এক্স-রে রেজিম (0.5–8 keV; 3–80 keV) কভার করে। অ্যাস্ট্রোস্যাটের স্বতন্ত্রতা হলো এর বিস্তৃত বর্ণালী পটি দৃশ্যমান, অতিবেগুনী, নরম এবং কঠিন এক্স-রে অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। [১২]
নাসা-ইসরো সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (NISAR) হল নাসা এবং ইসরোর একটি যৌথ প্রকল্প যা ২০২৫ সালে একটি পৃথিবী পর্যবেক্ষণ কৃত্রিম উপগ্রহে একটি দ্বৈত কম্পাঙ্ক সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (SAR) সহ-উৎপাদন এবং উৎক্ষেপণের জন্য। এটি হবে প্রথম রাডার ইমেজিং স্যাটেলাইট/ কৃত্রিম উপগ্ৰহ যা দ্বৈত কম্পাঙ্ক ব্যবহার করবে। মোট আনুমানিক ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়সহ, NISAR সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কৃত্রিম উপগ্ৰহ।[১৭]
চন্দ্রযান-৪ হল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এর একটি পরিকল্পিত চন্দ্র নমুনা-প্রত্যাবর্তন মিশন এবং এটি তাদের চন্দ্রযান কর্মসূচীর চতুর্থ চন্দ্র অনুসন্ধান অভিযান। এতে চারটি মডিউল রয়েছে যথা: ট্রান্সফার মডিউল (টিএম), ল্যান্ডার মডিউল (এলএম), অ্যাসেন্ডার মডিউল (এএম) এবং রিএন্ট্রি মডিউল (আরএম)।
২০৪০ সাল নাগাদ ভারতীয় মহাকাশচারীরাচাঁদের বুকে পদার্পণ করবেন বলে জানিয়েছেন ইসরো-র চেয়ারম্যান এস সোমনাথ। তিনি জানিয়েছেন, দুই থেকে তিন জন মহাকাশচারীকে প্রথমে চাঁদের কক্ষপথের নিম্নভাগে পাঠানো হবে। দু'-তিন দিন সেখানে থাকার পর, ভারত মহাসাগরের বুকে নামিয়ে আনা হবে নিরাপদে। এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সোমনাথ বলেছেন, ‘‘২০৪০-এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চাঁদে পৌঁছে দিতে চান এক ভারতীয়কে। কিন্তু মহাকাশে মানুষ পৌঁছনোর জন্য সবচেয়ে আগে নিশ্চিত করতে হবে মহাকাশচারীর নিরাপত্তা। অথচ এখনও আমরা চাঁদে গিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসার পরীক্ষাই করিনি। তাই সবচেয়ে আগে সেই পরীক্ষা করা দরকার। চন্দ্রযান-৪ সেই চেষ্টাই করবে।’’ ফলত, আপাতত এই মিশনটি সম্পূর্ণরূপে পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ভারতীয় উপগ্রহ রয়েছে যেখানে বিজ্ঞান সম্পর্কিত যন্ত্রপাতি সেকেন্ডারি পেলোড হিসেবে রয়েছে। এই উপগ্রহগুলির মূল লক্ষ্য মহাকাশ বিজ্ঞান নয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম ভারতীয় উপগ্রহ আর্যভট্টে একটি এক্স-রে পেলোড উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
এসটিএস-৫১-বি স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার মিশনে অনুরাধা ছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল মহাজাগতিক রশ্মি পরীক্ষা। এটিতে প্লাস্টিকের শিট দিয়ে তৈরি একটি ব্যারেল আকৃতির রেকর্ডার ছিল। এটি ৬৪ ঘন্টা ধরে প্রতি মিনিটে সাত হারে মহাজাগতিক রশ্মি সনাক্ত করেছে এবং ১০০০০ শিট ডেটা তৈরি করেছে।
স্ট্রেচড রোহিণী স্যাটেলাইট সিরিজের এসআরওএসএস-সি২ উপগ্রহে, একটি গামা-রে বার্স্ট ডিটেক্টর উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।