বিষয়বস্তুতে চলুন

চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
আইইউসিএন বিষয়শ্রেণী IV (বাসস্থান/প্রজাতি ব্যবস্থাপনা অঞ্চল)
চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
মানচিত্র চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যের অবস্থান দেখাচ্ছে
বাংলাদেশে অবস্থান
অবস্থানভোলা, বরিশাল বিভাগ, বাংলাদেশ
নিকটবর্তী শহরচরফ্যাশন
স্থানাঙ্ক২১.৯২৫২৫০° উত্তর ৯০.৬৪৬৩৩৪° পূর্ব
আয়তন৪০.০০ হেক্টর
স্থাপিত১৯৮১
কর্তৃপক্ষবাংলাদেশ বন বিভাগ

চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণের অভয়ারণ্য। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে মেঘনাতেতুলিয়া নদীর মোহনায় কয়েক শত বছর আগে সৃষ্ট চর কুকরি-মুকরি দ্বীপে এই অভয়ারণ্যটি গড়ে উঠেছে। এটি ‘চরফ্যাশন বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য’ নামেও পরিচিত।

এই অভয়ারণ্যটি প্রাকৃতিকভাবে গঠিত গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত, যা বরিশাল শহর থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার এবং ভোলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে। এর মোট আয়তন প্রায় ৪০ ha (৯৯ একর), এবং এটি দীর্ঘাকৃতির। অধিকাংশ এলাকাই দিনে দু’বার জোয়ারে প্লাবিত হয় এবং ঘন ম্যানগ্রোভ অরণ্যে আবৃত। এখানকার মাটি প্রধানত কাদা প্রকৃতির।

বন্যপ্রাণে সমৃদ্ধ এই অভয়ারণ্যে রয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি হরিণ। এছাড়াও এখানে দেখা যায় লাল কাঁকড়া, বুনো মহিষ, বানর, বন বিড়াল, মেছোবাঘ, ভোঁদড়, শিয়াল, বনমোরগ, এবং শীতকালে আগত বিভিন্ন পাখি পরিযানসহ নানা প্রজাতির বন্য প্রাণী। এসব কারণে চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হয়।[][]

আবহাওয়া ও ইতিহাস

[সম্পাদনা]

বর্ষাকালে এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি; বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ২,৭৯০ মিমি (১১০ ইঞ্চি)[] সারা বছর আবহাওয়া গরম ও আর্দ্র থাকে। অভয়ারণ্য এলাকা ছয়টি ছোট খাল বা ক্রীক দ্বারা বিভক্ত।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

স্থানীয়দের মতে, প্রায় ১৯৩০ সালের দিকে ব্রিটিশ রাজ-এর সময় এই দ্বীপে মানুষের বসবাস শুরু হয়। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে আঘাত হানা ভোলা ঘূর্ণিঝড়[] পুরো দ্বীপের মানববসতি ধ্বংস করে দেয়। এরপর, ১৯৭৩/১৯৭৪ সালে পুনরায় মানুষ দ্বীপে ফিরে আসে এবং মাছ ধরা ও কৃষিকাজ শুরু করে। বাংলাদেশ বন বিভাগ তখন দ্বীপে বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ লাগানো শুরু করে। ১৯৮৯ সালের ১৪ মে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার একর জমিতে সংরক্ষিত শ্বাসমূলীয় ম্যানগ্রোভ জাতীয় বৃক্ষের বনায়ন শুরু হয়।[] বর্তমানে চরে বনভূমির পরিমাণ ৮৫৬৫ হেক্টর, যার মধ্যে ২১৭ হেক্টর জমি বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম এবং বসতি ও কৃষি আবাদের জন্য প্রায় ৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমি রয়েছে।

পরিচালনা

[সম্পাদনা]

এই উদ্যান পরিচালনার দায়িত্বে আছেন একজন রেঞ্জ কর্মকর্তা এবং একজন বন প্রহরী। এটি ভোলার উপকূলীয় বন বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) সংশোধনী আইন, ১৯৪৭-এর অধীনে এটিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[] এখানে সংরক্ষণ কার্যক্রম ছাড়া কোনো বনসম্পর্কিত কার্যক্রম পরিচালিত হয় না।

উদ্ভিদ ও প্রাণী

[সম্পাদনা]

এই অভয়ারণ্য একটি মোহনা-ভিত্তিক পরিবেশব্যবস্থা; এর বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বন এবং মাঝেমধ্যে খোলা কাদার চরা রয়েছে।

উদ্ভিদ

[সম্পাদনা]

এই অভয়ারণ্য ও দ্বীপে ৭৬টি গোত্রভুক্ত ২৭৭টি উদ্ভিদ প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৯১টি গাছ, ৩৩টি ঝোপ, ১১৮টি ভেষজ এবং ৩৫টি লতা প্রজাতি।[] সাধারণ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির মধ্যে আছে Sonneratia apetala, বাইন (Avicennia officinalis), গেওয়া (Excoecaria agallocha), Acanthus ilicifolius, খালিসা (Ageiceras maius) এবং Typha angustifolia[]

প্রাণী

[সম্পাদনা]

সাধারণ স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে ফিশিং ক্যাট (Felis viverrina) ও ওরিয়েন্টাল ছোট-পাঞ্জার জলভোঁদড় (Aonyx cinerea)। পানির পাখির মধ্যে রয়েছে বিটার্ন, বক, সাদা বক, মাছরাঙা ইত্যাদি যেগুলো এখানে খুবই সাধারণ। এই অভয়ারণ্যে আটটি প্রজাতির বক প্রজনন করে। গ্রে পেলিকান বা স্পট-বিলড পেলিকান-এরও দেখা মেলে, যাকে আইইউসিএন রেড ডেটা বুকের কাছাকাছি বিপন্ন (Near threatened) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[] এছাড়াও, মনিটর টিকটিকি-এর তিনটি প্রজাতি—(Varanus salvator), বেঙ্গল মনিটর (Varanus bengalensis) এবং হলুদ মনিটর (Varanus flavescens)—এই অভয়ারণ্যে পাওয়া যায়।

হুমকি

[সম্পাদনা]

এই অঞ্চলের প্রধান হুমকি হলো কৃষিকাজের জন্য জমি দখল, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং বহিরাগত বিদেশি উদ্ভিদের আগ্রাসন।[]

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য"জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ। ৩১ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; IUCN2 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. 1 2 3 Green, Michael J.B. (১৯৯০)। IUCN directory SouthAsian Protected Areas (পিডিএফ) (First সংস্করণ)। Cambridge, UK: IUCN Publication। পৃ. ১৫। আইএসবিএন ২-৮৩১৭-০০৩০-২। ২৭ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৯
  4. 1 2 3 Uddin, M.Z.; Md Abiabdullah (ডিসেম্বর ২০১৬)। "TAXONOMIC STUDY ON THE ANGIOSPERMS OF CHAR KUKRI MUKRI WILDLIFE SANCTUARY, BHOLA DISTRICT"Journal of Asiatic Society. Bangladesh৪২ (2): ১৫৩–১৬৮। ডিওআই:10.3329/jasbs.v42i2.46219। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৯
  5. "Bhola Cyclone in 1970"www.arcgis.com। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৯
  6. টেলিভিশন, Ekushey TV | একুশে। "প্রকৃতির বিস্ময় 'চর কুকরি মুকরি'"Ekushey TV (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০২৩
  7. "IUCN Red list"www.iucnredlist.org। International Union for Conservation of Nature and Natural Resources.। অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]