বিষয়বস্তুতে চলুন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের লোগো
লাল-সাদা রঙের ভবনের সম্মুখ দৃশ্য
গ্রন্থাগার ভবন
দেশবাংলাদেশ
ধরনসাবস্ক্রিপশন গ্রন্থাগার
প্রতিষ্ঠিত১৮ নভেম্বর ১৯৬৬ (1966-11-18)
অবস্থানচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সড়ক, ফতেহপুর, হাটহাজারী
পরিষেবা এলাকাচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাঙ্গন
স্থানাঙ্ক২২°২৮′১৪″ উত্তর ৯১°৪৭′০৫″ পূর্ব / ২২.৪৭০৬৫৮২৩° উত্তর ৯১.৭৮৪৬৯৮৯৬° পূর্ব / 22.47065823; 91.78469896
সংগ্রহ
সংগৃহীত আইটেমবই, সাময়িকী, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, ডেটাবেস, মানচিত্র, এবং পাণ্ডুলিপি
আকারপ্রায় ৪ লক্ষ
অন্যান্য তথ্য
পরিচালকইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী
কর্মচারী৮৬+ (২০১০)
মূল সংগঠনচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েবসাইটlibrary.cu.ac.bd
মানচিত্র
মানচিত্র

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। চট্টগ্রামের প্রথম এবং সর্ববৃহৎ এই গ্রন্থাগার ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গ্রন্থাগারের বর্তমান সংগ্রহ সংখ্যা চার লক্ষের অধিক।[][] গ্রন্থাগারটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত।

এটি বাংলাদেশের একটি প্রধান গবেষণা গ্রন্থাগার, যেখানে বিভিন্ন ভাষায় ও বিন্যাসে মুদ্রিত এবং ডিজিটাল সংস্করণে: বই, পাণ্ডুলিপি, সাময়িকী, সংবাদপত্র, পত্রিকা, উপাত্ত, গবেষণা, বিশ্বকোষ, অভিধান, হ্যান্ডবুক, ম্যানুয়েল, মানচিত্র সহ বিভিন্ন সংগ্রহ রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রায় আড়াইশ থেকে একশ বছরের মধ্যে অনুলিখিত প্রাচীন ভূজপত্র, তানপত্র, হাতে তৈরি তুলট কাগজ, তালপাতা ও বাঁশখণ্ডের উপর বাংলা, সংস্কৃত, পালি, আরবি, ফার্সি এবং উর্দু ভাষায় রচিত পাণ্ডুলিপি সংগহ এবং আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কর্তৃক সংগৃহীত ১৮৭২ থেকে ১৯৫৩ সালের মধ্যে প্রকাশিত প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুরানো সাময়িকী।

অবস্থান

[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার (১৪ মাইল) উত্তরে হাটহাজারী থানার ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার শহীদ মিনারের পাশে এবং আইটি ভবনের পশ্চিমে এই গ্রন্থাগারের অবস্থান।[][][] গ্রন্থাগারের সামনে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ এবং দক্ষিণে চাকসু ভবন।[][][][] গ্রন্থাগার ভবনের পশ্চিম পাশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর অবস্থিত।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]
২০১৫ সালে গ্রন্থাগার ভবন

১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বরের কয়েকজন কর্মকর্তা তৎকালীন কলা নিয়ে ভবনের নীচতলায় ১,২০০ বর্গফুট (১১০ বর্গমিটার) বিশিষ্ট একটি কক্ষে মাত্র ৩০০টি বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে গ্রন্থাগারটির যাত্রা শুরু হয়।[][] পরবর্তীকালে ১৯৬৮ সালে বর্তমান প্রশাসনিক ভবনের (মল্লিক ভবন) দক্ষিণ পাশে মানবিক ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ (বর্তমানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ) ভবনে প্রায় ১৪ হাজার বই নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর অস্থায়ী গ্রন্থাগারটি বর্তমান ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকে কিছুদিনের জন্য গ্রন্থাগারটি পুনরায় বর্তমান প্রশাসনিক ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। বর্তমানে ৫৬,৭০০ বর্গফুট (৫,২৭০ বর্গমিটার)[] পরিমিত এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এটি চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক গ্রন্থাগার।[] ১৯৯০ সালে বর্তমান আধুনিক মোজাইক মেঝে বিশিষ্ট গ্রন্থাগারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দীন[]

২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরে এই গ্রন্থাগারের বরাদ্দ ছিল প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা। পূর্বে এ গ্রন্থাগারের জন্য ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছিল।[] ২০০৫ সালের হিসাবে গ্রন্থাগারের জন্য ৮,৭৫০টি বই, ১২০০টি বাঁধাইকৃত সাময়িকী, ১৫০টি থিসিস, ১২০টি সিডি রম সহ স্থানীয় ও বিদেশি প্রায় ৪৫০টি সাময়িকী সংগ্রহ করা হয়েছিল।[]

পরিচালনা

[সম্পাদনা]

গ্রন্থাগারটি উপ-উপাচার্যের সভাপতিত্বে নেতৃত্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন সহ ১৪ সদস্যের একটি কমিটি কর্তৃক পরিচালিত। গ্রন্থাগারিক, এই কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে বিবেচিত। এই কমিটি গ্রন্থাগার পরিচালনার যাবতীয় নীতিমালা প্রণয়ন এবং সময়ানুযায়ী গ্রন্থাগারের কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে।

গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার পর থেকে এযাবৎকাল পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে দশ জন গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম প্রতিষ্ঠাতা সহকারী গ্রন্থাগারিক ছিলেন আতাউর রহমান, যিনি ৩১ অক্টোবর ১৯৬৬ থেকে ১৬ অক্টোবর ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন।[]

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবন থেকে গ্রন্থাগার ভবনের দৃশ্য
প্রতিবন্ধী পাঠকক্ষ
মুক্তিযুদ্ধ কর্নার এবং অন্যান্য শাখা

গ্রন্থাগারটি একটি ত্রিতল ভবনে অবস্থিত, যেখানে অনুষদভিত্তিক পাঠকক্ষ রয়েছে। প্রতিটি পাঠকক্ষের সাথে শিক্ষকদের জন্য পৃথক পাঠকক্ষের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও এম.ফিল এবং পিএইচডি গবেষকদের জন্য রয়েছে ২৪টি গবেষণাকক্ষ।[১০]

ভবনের নীচ তলায় রয়েছে প্রশাসনিক শাখা, গ্রন্থাগার কার্যালয়, সংস্থাপন শাখা, প্রক্রিয়াকরণ শাখা, বাঁধাই শাখা, প্রচার (Lending) শাখা, কলা পাঠকক্ষ, সভা-সিম্পোজিয়ামের জন্য একটি মিলনায়তন,[১০] এছাড়া রয়েছে কলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠকক্ষ, মিলনায়তন এবং দৈনিক সংবাদপত্র পাঠকক্ষ এবং নিরাপত্তা শাখা।[]

দ্বিতীয় তলায় রয়েছে বিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন এবং সামাজিক বিজ্ঞানের জন্য স্বতন্ত্র পাঠকক্ষ। এছাড়াও রয়েছে দুষ্প্রাপ্য ও পাণ্ডুলিপি এবং পুরাতন সংবাদপত্র শাখা, ফটোকপি শাখা, কম্পিউটার ল্যাব এবং ইন্টারনেট কক্ষ।[]

গ্রন্থাগারের মোজানীনে (দুইটি তলার মধ্যবর্তী নীচু তলা) রয়েছে রেফারেন্স বা উৎস শাখা, জার্নাল ও সাময়িকী শাখা, এবং গবেষণা কক্ষ।[] ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর আর আই চৌধুরীর নামে একটি কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে।[১১] এই কর্নারে আর আই চৌধুরীর ব্যক্তিগত সংগ্রহের ১০০৯টি বই এবং ৪৭৭টি জার্নাল সংগ্রহ করা হয়েছে।[১২] ২০১৮ সালে গ্রন্থাগার দপ্তরে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করা হয়।[১৩] ২০১৯ সালে গ্রন্থাগারে একটি সাইবার সেন্টার স্থাপন করা হয়।[১৪]

মুক্তিযুদ্ধ কর্নার

[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চার উপযোগী মুক্তিযুদ্ধ কর্নার ২০০৯ সালে চালু করা হয়। তৎকালীন উপাচার্য আবু ইউসুফ আলমের উদ্যোগে এই কর্নার স্থাপিত হয়। এখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংবলিত বই ও জার্নালসহ দুর্লভ চিত্রের সংগ্রহ। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ কর্নারে মোট বইয়ের সংখ্যা আনুমানিক ১১৩০।[১৫] এই কর্নারে রয়েছে দুইটি শাখা। দ্বিতল এই শাখায় উপরে রয়েছে ২০টি আসন এবং নীচে দুই সারিতে ৩০টি করে মোট ৬০টি আসন রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের বিপরীত পাশে রয়েছে দুটি বিজ্ঞান পাঠকক্ষ শাখা।[১৬]

প্রতিবন্ধী পাঠকক্ষ

[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের অধ্যয়নরত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ ২০১১ সালে একটি আলাদা পাঠকক্ষ চালু করে। শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠগ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই পাঠকক্ষে মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ২০৫ এবং রয়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ। যদিও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের তুলনামূলক অনুপস্থিতির কারণে বর্তমানে এটি বন্ধ রয়েছে।[১৫]

বিভাগ

[সম্পাদনা]
গ্রন্থসূচী
বুকস্ট্যাক এবং ইস্যু শাখা

গ্রন্থাগারে কার্যক্রম মূলত নিম্নলিখিত শাখার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে:

সংস্থাপন শাখা
যাবতীয় প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম এই শাখার থেকে সম্পাদন করা হয়।[১০]
সংগ্রহ শাখা
স্থানীয় এবং বিদেশি বই ও সাময়িকী, পত্রিকা ইত্যাদি সংগ্রহ এই শাখা পরিচালনা করে।[১৭]
বাধাই শাখা
বই, সাময়িকী পত্র, গবেষণা পত্র ইত্যাদি সংগ্রহের পরবর্তী প্রধান কাজ প্রয়োজন অনুসারে বাঁধাইয়ের কাজ এই শাখার অভ্যন্তরে করা হয়।[১৭]
প্রক্রিয়াকরণ শাখা
যাবতীয় সংগ্রহাদী সংগ্রহ এবং বাঁধাই কার্যক্রম সমাপ্তির পর সংযোজন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর সূচীকরণ, শ্রেণীকরণ, টাইপ এবং স্পাইন ইত্যাদি কাজ করা হয়। এছাড়াও এই শাখা হারানো বইসমূহের মূল্য নির্ধারণের কাজও করে থাকে।[১৭]
বই ইস্যু শাখা
এই শাখা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং গবেষকদের বই ইস্যু এবং ফেরত নেয়া হয়। পাশাপাশি প্রাত্যহিক ইস্যু এবং ফেরতের হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। এখানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই ফেরত দেওয়ার বিধান রয়েছে।[১৭]

সংগ্রহ

[সম্পাদনা]
কার্ড ক্যাটালগ

গ্রন্থাগারের সংগৃহীত পাঠসামগ্রীকে প্রধান সংগ্রহ, জার্নাল সংগ্রহ, রেফারেন্স সংগ্রহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থিসিস সংগ্রহ, দুষ্প্রাপ্য এবং পাণ্ডুলিপি শাখা এই পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।[]

গ্রন্থাগার ভবনের নীচ তলায় এর প্রশাসনিক শাখা যেখানে গ্রন্থাগারিকের অফিস সংস্থাপন শাখা, প্রক্রিয়াকরণ শাখা, বাধাই শাখা, সার্কুলেশন শাখা ছাড়াও কলা অনুষদের ছাত্রছাত্রীদের পাঠকক্ষ এবং মলিনায়তন ও দৈনিক পত্রিকা পাঠকক্ষ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কলা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং সমাজবিজ্ঞান এবং আইন অনুষদের পৃথক পাঠকক্ষ এবং বিষয় সংলগ্ন বইয়ের সমষ্টি। পাশাপাশি রয়েছে হস্তলিপি ও দুষ্প্রাপ্য শাখা, ফটোকপি ও কম্পিউটার ল্যাব। মোজানীন (দুইটি তলার মধ্যে নীচু একটি তলা) তলার রয়েছে রেফারেন্স শাখা এবং জার্নাল, সাময়িকী শাখা এবং ইন্টারনেট সার্ভিসকক্ষ এবং গবেষণাকক্ষ। এছাড়াও দেশী-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা, দুষ্প্রাপ্য বই এবং রেফারেন্স শাখার জন্যও রয়েছে আলাদা পাঠকক্ষ এবং সংলগ্ন বইয়ের সমষ্টি। জার্নাল শাখায় দেশী-বিদেশি সম্প্রতিককালে প্রকাশিত চাহিদা-সাময়িকী ছাড়াও পুরাতন সংখ্যাগুলো বাঁধাই করে ডিডিপি পদ্ধতি অনুসরণ করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে যেখানে প্রায় ৩২ হাজার বাঁধাইকৃত সাময়িকী রয়েছে।[]

রেফারেন্স শাখায় রয়েছে গবেষণা প্রতিবেদন, বিশ্বকোষ অভিধান, হ্যান্ডবুক, ম্যানুয়েল, পঞ্জিকা, গ্লোব, এনজিও প্রকাশনা, ন্যাড়া, আইএলও ইউনেস্কো, বিশ্বব্যাংক আইএমএফ, ইউনিসেফ বিবিএস, বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা। গ্রন্থাগারে দেশী-বিদেশি বই-পত্রিকা-জার্নালের সংখ্যা প্রায় দুই লাখের বেশি। এর মধ্যে দুর্লভ হাজার জার্নাল এবং দুই হাজার গবেষণাপত্র রয়েছে।[][][][১৮]

দুষ্প্রাপ্য ও পাণ্ডুলিপি এবং পুরাতন সংবাদপত্র শাখা

[সম্পাদনা]
দ্বিতীয় তলার দুষ্প্রাপ্য ও পাণ্ডুলিপি এবং পুরাতন সংবাদপত্র শাখা

গ্রন্থাগারের দুষ্প্রাপ্য ও পাণ্ডুলিপি এবং পুরাতন সংবাদপত্র শাখায় গবেষণা কর্মের উপাত্ত হিসেবে চিহ্নিত প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, দুর্লভ দলিল, বই, সাময়িকী, দৈনিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ সংগ্রহ সংরক্ষিত রয়েছে। পুঁথি সংগ্রাহক আবদুস সাত্তার চৌধুরী সংগৃহীত পুঁথি, পুস্তক এবং পাণ্ডুলিপি নিয়েই এই দুষ্প্রাপ্য এবং পাণ্ডুলিপি শাখা চালু করা হয়েছিল। এ-শাখায় প্রাচীন ভূজপত্র, তানপত্র, হাতে তৈরি তুলট কাগজ, তালপাতা ও বাঁশখণ্ডের উপর বাংলা, সংস্কৃত, পালি, আরবি, ফার্সি এবং উর্দু ভাষায় রচিত ৫৬৫টি পাণ্ডুলিপি সংগৃহীত রয়েছে, যে সকল পাণ্ডুলিপি প্রায় আড়াইশ থেকে একশ বছরের মধ্যে অনুলিখিত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, সফর আলি বিরচিত গোলে হরমুজ খান, গয়াস বিরচিত বিজয় হামজা, জিন্নত আলী রচিত মনিউল বেদায়াত, সৈয়দ গাজী বিরচিত হর গৌড়ির পুঁথি, হামিদুল্লাহ খাঁ রচিত ধর্ম বিবাদ, পরাগল খাঁ রচিত মহাভারত ইত্যাদি।[]

এছাড়াও রয়েছে দুর্লভ কোরান, হাদিস এবং ফেকাহ শাস্ত্র। এই শাখায় প্রায় দুই শতাধিক পুরানো ছাপা পুঁথির সংকলন রয়েছে।[] দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, সমাজ বিজ্ঞান, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ক প্রায় তিন হাজারের অধিক গ্রন্থ রয়েছে।[] পরবর্তীতে মুন্সী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ প্রদত্ত সংগ্রহ অধ্যাপক ডক্টর আবদুল করিম সংগ্রহ (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য) অধ্যাপক প্রক্টর আবদুল গফুর প্রদত্ত সংগ্রহ, ইবনে গোলাম নবী প্রদত্ত সংগ্রহ, বাবু কাসেম চন্দ্র রক্ষিত প্রদত্ত সংগ্রহ রশীদ আল ফারুকী প্রদত্ত সংগ্রহ, অধ্যাপক ডক্টর ভূঁইয়া ইকবাল প্রদত্ত সংগ্রহও এ শাখাকে সমৃদ্ধ করেছে।[][][]

পত্রিকা ও সাময়িকী

[সম্পাদনা]

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহ ছাড়াও আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কর্তৃক প্রদত্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুরানো সাময়িকী রয়েছে এই গ্রন্থাগারে, যেগুলো ১৮৭২ থেকে ১৯৫৩ সালের মধ্যে প্রকাশিত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, অঞ্জলী, অনুসন্ধান, পূর্ব পাকিস্তান, আর্যাবর্ত, সীমান্ত, পূরবী, পাঞ্চজন্য, চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত সাধনা, ভারতী, আর এসলাম, ইসলাম প্রচারক, আলো, এডুকেশন গেজেট, সাপ্তাহিক বার্তাবহ, ছায়াবিথী, ঢাকা রিভিউ, পূর্ণিমা, প্রকৃতি, প্রতিভা, ভাণ্ডার, প্রবাসী, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা; অগ্রগতি ইত্যাদি।[][]

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. ফয়েজুল আজিম (২০১২)। "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর (সম্পাদকগণ)। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন ৯৮৪৩২০৫৯০১ওসিএলসি 883871743ওএল 30677644M
  2. 1 2 3 4 5 গাজী মোহাম্মদ নুরউদ্দিন। "প্রাচীন পুঁথি-পাণ্ডুলিপির বিশাল সংগ্রহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার"দৈনিক আজাদী। ২৩ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৫
  3. "Chittagong University Library (Chittagong, Bangladesh)"। Libraries & Archives in South Asia। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৫[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: প্রাকৃতিক ও স্থাপত্য সৌন্দর্যের আধার"দৈনিক ইনকিলাবঢাকা। ১৫ এপ্রিল ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৫[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 টিপু, মহিউদ্দিন (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি আলোকিত এক টুকরো গ্রাম"দৈনিক সংগ্রাম। ১২ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৯
  6. 1 2 3 4 5 খালেদ, দাশগুপ্ত এবং হক ১৯৯৫, পৃ. ৩০৯-৩১০।
  7. সাহাবুদ্দীন জামিল (২৮ নভেম্বর ২০১৩)। "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার"সাম্প্রতিক দেশকাল। ২ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৫
  8. "চবি যেন জঙ্গলপট্টির জাদুঘর"দৈনিক ইনকিলাব। ২০ নভেম্বর ২০১৬। ১৪ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৯
  9. 1 2 3 "মূল্যবান বইয়ের সংগ্রহশালা দুষ্প্রাপ্য ও পাণ্ডলিপি শাখা"দৈনিক জনকণ্ঠ। ৩১ অক্টোবর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৯[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  10. 1 2 3 তাহের ২০১০, পৃ. ৭৪।
  11. "চবি গ্রন্থাগারে আধুনিকায়ন ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন"। প্রিয়.কম। ১৮ এপ্রিল ২০১৮। ১২ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৯
  12. চট্টগ্রাম প্রতিদিন ডেস্ক (৪ মে ২০১৬)। "কালের সাক্ষ্য বহন করে গ্রন্থাগার"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ৩ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৯
  13. "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে 'বঙ্গবন্ধু কর্ণার'"দৈনিক পূর্বদেশ। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮। ১২ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৯
  14. "চবির গ্রন্থাগারে এবার যুক্ত হলো সাইবার সেন্টার"। thedailycampus। ৯ মার্চ ২০১৯। ১২ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৯
  15. 1 2 সাইফ উল আলম, মুবীন কাউসার নুফা, মুমতাহিনা আলম এশা। "ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক চবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার"। বিনোদন সারাবেলা। ১৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৫{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক)
  16. "ইন্টারনেটে সহজলভ্য বই, পাঠক কমছে চবি গ্রন্থাগারে"। dainikshiksha। ২০ মার্চ ২০১৭। ২৩ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৯
  17. 1 2 3 4 তাহের ২০১০, পৃ. ৭৫।
  18. হেদায়েত উল্লাহ খন্দকার পলাশ। "জ্ঞানপিপাসুদের জ্ঞানভাণ্ডার"যায়যায়দিন। ১ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৫
  • খালেদ, মোহাম্মদ; দাশগুপ্ত, অরুণ; হক, মাহবুবুল, সম্পাদকগণ (নভেম্বর ১৯৯৫)। "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার"। নগর-জীবন। হাজার বছরের চট্টগ্রাম (৩৫ বর্ষপূর্তি বিশেষ সংখ্যা)। চট্টগ্রাম: এম এ মালেক, দৈনিক আজাদী: ৩০৯–৩১০। {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: |সংগ্রহের-তারিখ= এর জন্য |ইউআরএল= প্রয়োজন (সাহায্য); অবৈধ |সূত্র=harv (সাহায্য)
  • তাহের, সৈয়দ মুহাম্মদ আবু (২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার"। খান, আমিরুল আলম; শিশির, মীর আবু সালেহ শাসসুদ্দীন (সম্পাদকগণ)। লাইব্রেরি নিয়ে যত কথা। চট্টগ্রাম: এসেলারো। পৃ. ৭৪–৭৫। আইএসবিএন ৯৮৪৭০১৮৫০০০৪৪ {{বই উদ্ধৃতি}}: |আইএসবিন= মান: অবৈধ উপসর্গ পরীক্ষা করুন (সাহায্য); অবৈধ |সূত্র=harv (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]